উত্তর দিনাজপুর জেলা
উত্তর দিনাজপুর জেলা ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বিভক্তকরণের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এই জেলার পূর্বে বাংলাদেশের দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁ জেলা, পশ্চিমে বিহার রাজ্যের পূর্নিয়া, কাটিহার ও কিষাণগঞ্জ জেলা; উত্তরে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা, এবং দক্ষিণে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর দিনাজপুর পঞ্চায়েতি-রাজ মন্ত্রণালয়ের দ্বারা দেশের সর্বাধিক পিছিয়ে পড়া ২৫০টি জেলার তালিকায় স্থান পেয়েছিল। জেলাটির অর্থনীতি মূলত কৃষি অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে উত্তর দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা ৩০৭১৩৪ জন। কৃষি ছাড়াও উত্তর দিনাজপুর বাঁশের কাজের জন্য প্রসিদ্ধ।
উত্তর দিনাজপুর জেলার সরকারি ভাষা বাংলা, হিন্দি ও উর্দু। এছাড়া এই জেলায় বসবাসকারী বেদিয়া জনজাতি মূলত কুর্মালি ভাষায় কথা বলে, যে ভাষাটিকে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলাতেও কুর্মালি ভাষা ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমবঙ্গের বেদিয়া জনজাতি ‘বেদিয়া কুর্মি’ নামেও পরিচিত। বেদিয়া জনজাতি মূলত পশুপালনের উপর নির্ভরশীল হলেও বর্তমানে এরা কৃষিকাজের উপরেও নির্ভর করে থাকে। এরা পূর্বে প্রাচীন জনজাতির ধর্ম অনুসরণ করলেও এখন এরা প্রধানত মুসলিম ধর্মাবলম্বী, এবং নিজেদের জাতির মধ্যে বিবাহ প্রচলিত। বেদিয়া জনজাতির গোত্রগুলি মাই, মুদকাটি, কুঁদরি, ডারহা ইত্যাদি দেবদেবীর পূজা করে। এছাড়া গ্রামদেবতা হিসেবে ঝেরবুড়ি, গাওয়ানদেতি মহাদানিয়া ইত্যাদির উপাসনা করে। ফাগুন, সারহুল, জিতিয়া, সোরহাই ইত্যাদি এই জনজাতির নিজস্ব উৎসব। পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সম্পত্তির অধিকারি হয়। বিবাহ বরের বাড়িতে সম্পন্ন হয়। মৃত্যুর পর দেহ সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর পরবর্তী রীতিসমূহের অনুষ্ঠান ‘তেলনাহান’ ও ‘দশকর্ম’ নামে পরিচিত।
কুর্মালি ভাষা ভারতীয়-আর্য গোষ্ঠির পূর্বী শাখার একটি ভাষা। বিশেষজ্ঞদের মতে কুর্মালি ভাষার সাথে প্রাচীন বাংলার প্রামাণ্য সাহিত্য চর্যাপদের ভাষার প্রভূত সাদৃশ্য রয়েছে। কুর্মালি ভাষার নিজস্ব লিপির অভাবে দেবনাগরী লিপির ব্যবহার হতো, তবে বর্তমানে ‘চিস’ লিপির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলা ভাষা থেকে কুর্মালি ভাষায় শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটে। তবে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খন্ডে কুর্মালি ভাষায় পঠনপাঠনের কাজ শুরু হওয়ায় ভাষাটির বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
