পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

ডিমাসা সংস্কৃতি

ডিমাসা সমাজে মোট ৮৪টি ক্ল্যান অর্থাৎ গোত্রের অস্তিত্ব রয়েছে, যাদের মধ্যে ৪২টি পুরুষ ও ৪২টি মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট। পুরুষদের জন্য নির্ধারিত গোত্রগুলি ‘সেংফং’ এবং মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট গোত্রগুলি ‘জুলু’ নামে পরিচিত। এরা প্রধানত গ্রামকেন্দ্রিক জীবন যাপন করে; ডিমাসা সমাজের গ্রামগুলি ‘নোহলাই’ নামে পরিচিত। একটি গ্রামের সম্পুর্ণ জনসংখ্যাকে একত্রে ‘রাজি’ নামে পরিচিত। ডিমাসা সমাজে গ্রামের প্রধান ‘খুংনাং’ নামে পরিচিত। এর সহকারীরা (যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তি) ‘দিল্লিক’ এবং ‘দাউলাথু’ নামে পরিচিত। ডিমাসা জনজাতির সমাজ মূলত পেট্রিলোকাল ও পেট্রিলিনিয়াল। বিধবাবিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার ডিমাসা সমাজে স্বীকৃত হলেও সম্পত্তিকে তিনটি নির্দিষ্ট ভাগে বিভক্ত করা হয়- পেটারন্যাল অর্থাৎ পিতৃসম্পত্তি, যার মধ্যে জমি, টাকাপয়সা এবং গবাদিপশুর মালিকানা আসে; ম্যাটারন্যাল অর্থাৎ মাতৃসম্পত্তি, যার মধ্যে মূলত গয়না ও পরিধেয় বস্ত্রের মালিকানা আসে; কমন অর্থাৎ সাধারণ সম্পত্তির মধ্যে বাসনপত্র এবং বাড়িতে ব্যবহৃত সাধারণ জিনিসপত্রের মালিকানা আসে। এদের সমাজে যৌথ পরিবার প্রথার আধিক্য নেই, মূলত অনুপরিবারই ডিমাসা সমাজের ভিত্তি। পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেদের উপর এবং মাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েদের উপর ন্যস্ত হয়।

এরা প্রধানত কৃষিভিত্তিক জীবন যাপন করে; তবে এদের কৃষিকাজ চিরাচরিত প্রথায় সম্পন্ন হয় না। মূলত স্থানান্তর কৃষি এবং ঝুমচাষের মাধ্যমে ধান, ভুট্টা ও বিভিন্ন প্রকার সুতোর চাষই এদের প্রধান জীবিকা। এছাড়া অনেক ডিমাসা পরিবারের মধ্যে আনারস, কমলালেবু ও সরষে চাষ প্রচলিত রয়েছে।

ডিমাসা জনজাতির প্রধান উৎসব হলো ‘বুসু’, যেখানে ভালো ফসলের চাষের পর এদের প্রধান দেবতা ‘ব্রাই-সিবরাই’ এর উপাসনা করা হয়। উৎপন্ন ফসলের সমগ্র অংশই প্রথমে এই দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। এই ‘বুসু’ উৎসব আবার তিনপ্রকার হয়, যেমন- ‘সুরেম বুসু’, যা তিন থেকে পাঁচদিন ধরে পালিত হয়। ‘হাংসেউ বুসু’ সাতদিন ধরে এবং ‘জিদাব বুসু’ একদিন পালিত হয়। ‘গজাইবাউ’ নামক বিশেষ ব্যক্তি এই উৎসবের প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এই উৎসবে পশুপাখির মাংস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। এই উৎসব প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারি পালন করা হয়। যন্ত্রসঙ্গীত এবং সমবেত নৃত্য ডিমাসা জনজাতির অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। ‘খরম’ এবং ‘মুরি’ নামে দুটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র নাচের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। ডিমাসা ভাষায় যেকোনো প্রকার নাচ ‘বাইদিমা’ নামে পরিচিত। ডিমাসা সমাজের বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার ফলে লৌকিক হিন্দুধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলিও ডিমাসা জনজাতির ধর্মবিশ্বাসে অনুপ্রবেশ করছে। ডিমাসা সমাজের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি বর্তমানে পশ্চিমি ধারার সংস্কৃতির সঙ্গেও বিমিশ্রিত হচ্ছে। অসমিয়া, বাংলা, নাগামিজ, মিজো, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি সরকারি ভাষার প্রতি নতুন প্রজন্মের বর্ধিত আগ্রহও ভাষাবৈশিষ্ট্যগুলির অবনমনের অন্যতম প্রধান কারণ। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় ডিমাসা ভাষা ‘ভালনারেবল’ শ্রেণিতে জায়গা পেয়েছে; অর্থাৎ ভাষাটি বর্তমানে ডিমাসা সমাজের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ডোমেনে সীমাবদ্ধ এবং এই জনজাতির শিশুরা নিজেদের জনজাতির ভাষাটি শিখতে আগ্রহী নয়।

গ্রন্থপঞ্জী:

Census of India- 2011

Barpujari, S.K. (ed.). 1997; History of the Dimasas: from the earliest time to 1896 AD.

Bordoloi, B.N. 1988; The Dimasa Kachari; Tribal Research Institute of Assam, Guwahati

Brahma, P. 2014; Phonology and Morphology of Bodo and Dimasa: A Comparative Study

Census of India- 2011

Danda, D. 1989; The Dimasa Kacharis of Assam; Concept Publishing co. New Delhi

Jacquesson, F. A Dimasa Grammar

Langthasa, D. & Evans, J.P. 2018-19; Numeral Classifier and Word Order in Dimasa and Bodo-Garo; Kyoto University

Rajioung, Pronomita. 2021; Phonological Features in Dijuwa: A Dimasa Dialect; Language in India. Vol-2