মারাম-খুল্লেন অথবা মারাম-নামদি গ্রামটিই মারাম জনজাতির নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐতিহ্যকে অধিকতর মাত্রায় টিকিয়ে রেখেছে। পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী হওয়ার ফলে মূলত ঝুমচাষের উপর নির্ভর করেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ভিজে ধানের চাষ মারাম জনজাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চাষের কাজে মারাম জনজাতির পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সমভাবে অংশগ্রহণ করে। তবে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ এবং রান্না ও পরিবারের দেখভালের কাজ মহিলারাই করে থাকেন। এদের জীবন গ্রামকেন্দ্রিক। গ্রামের প্রধান তথা রাজা ‘সাগং’ নামে পরিচিত। মারাম জনজাতির প্রত্যেকটি লিনিয়েজের একজন পৃথক রাজা বর্তমান। এই জনজাতির মধ্যে রাজতন্ত্রই প্রচলিত। তবে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মারাম সমাজে প্রচলিত ম্যাট্রিলিনিয়াল ও ম্যাট্রিয়ার্কাল প্রবণতার হ্রাস ঘটছে।
মারাম জনজাতির পালিত দুটি প্রধান উৎসব হলো ‘পুঙ্ঘি’ (জুলাই মাসে পালিত) এবং ‘কাঙ্ঘি’ (ডিসেম্বর মাসে পালিত)। এছাড়াও প্রতি বছর এপ্রিল মাসে পালিত ‘মাংকং’ উৎসবের মাধ্যমে এরা মহিলাদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে। বর্তমানে মারাম জনজাতির অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করলেও এখনও বেশ কিছু মানুষ এদের প্রাচীন ধর্মকেই পালন করেন, যা অ্যানিমিজমের একটি বিশেষ রূপ। আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটলেও বিশেষত এই জনজাতির মেয়েরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই লিঙ্গগত অসাম্যের বিষয়টি জনজাতির সার্বিক জীবনযাত্রার মানের অবনমন ঘটিয়েছে। এই জনজাতি নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নাগামিজ ও ইংরেজি ভাষার ব্যাপক প্রসার এই জনজাতির ভাষাকে পিছনের সারিতে নিয়ে গেছে। নাগাল্যাণ্ড রাজ্যের ক্ষেত্রে অন্যান্য নাগা জনজাতির সঙ্গে এবং অসম ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অসমীয়া, বাঙালি এবং অন্যান্য প্রধান জনজাতির সঙ্গে অস্তিত্ব রক্ষার অসম প্রতিযোগিতায় মারাম জনজাতি ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এই সমস্ত কারণে ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় মারাম ভাষা ‘ভালনারেবল’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।
Census of India- 2011
Census of India- 2001
Joseph, A. 1992; Maram Nagas, a socio-cultural study
Maram; www.ethnologue.com
Namkung, J. (1996). Phonological inventories of Tibeto-Burman languages.
Stephen, A. 2020; Problems of Higher Education among Maram Naga Tribal Women: An Empirical Study; Journal of Critical Reviews