বানতাওয়া ভাষা (যা আন ইয়ুং, বানতাবা, বানতাওয়া দুম, কিরাওয়া ইয়ুং নামেও পরিচিত) হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের কিরান্তি শাখার একটি ভাষা। এটি নেপাল, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় প্রচলিত। এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষজন বানতাওয়া নামে পরিচিত যাদের আদি বাসস্থান পূর্ব নেপালের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে নেপালের ১.৬৩ শতাংশ মানুষ বানতাওয়া ভাষা ব্যবহার করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে ভারতে বানতাওয়া ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ১৭০০০০। ভারত ও ভূটানে বসবাসকারী ‘রাই’ জনগোষ্ঠীর মানুষ লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে বানতাওয়া ভাষা ব্যবহার করেন।

বানতাওয়া ভাষার ৫টি প্রকার বর্তমান- উত্তর বানতাওয়া (দিলপালি), দক্ষিণ বানতাওয়া (চেওয়ালি, ওখরেলি, হাতুওয়ালি), পূর্ব বানতাওয়া (ধানকুটা), পশ্চিম বানতাওয়া (আমচোকে) এবং ওয়ানা বানতাওয়া। বর্তমানে বিলুপ্ত ওয়ালিং ভাষাকে বানতাওয়া ভাষার সঙ্গে নিকট সম্পর্কযুক্ত গণ্য করা হয়। নেপালে বসবাসকারী বানতাওয়া জনজাতি ‘কিরাত খাম্বু’ নামে একপ্রকার বর্ণমালা ব্যবহার করে; পশ্চিমবঙ্গের বানতাওয়া জনজাতি দেবনাগরী লিপি ব্যবহার করে। এই বর্ণমালায় ৩২টি ব্যঞ্জন এবং ৯টি স্বরবর্ণ বর্তমান। এই ভাষায় ১ থেকে ১০ অবধি সংখ্যাবাচক শব্দের অস্তিত্ব রয়েছে।

পূর্ব নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত প্রায় ৩০ এর বেশি ভাষা কিরান্তি শাখার অন্তর্গত। ‘কিরান্তি’ শব্দটি সংস্কৃত ‘কিরাত’ শব্দ থেকে এসেছে, যা সাধারণভাবে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অহিন্দু জনজাতিগুলিকে বোঝায়। এই শাখার ভাষাগুলির সাধারণ শব্দক্রম হলো উদ্দেশ্য-বিধেয়-ক্রিয়া। এগুলি ‘মডিফায়ার-হেড’ ক্রম অনুসরণ করে এবং কোন প্রোনোমিনালিজেশন নেই। বাক্যের ‘কোর আর্গুমেণ্টটি’ এর্গেটিভ কেস গ্রহণ করে, সকর্মক (বিধেয়) এবং অকর্মক (উদ্দেশ্য) প্রধানত আনমার্কড এবং সকর্মক ক্রিয়ার এজেন্ট এর্গেটিভ/ইন্সট্রুমেণ্টাল কেস গ্রহণ করে।

এই ভাষার বিশেষ্য যেকোনো দৈর্ঘ্যের হতে পারে- দুই দল বিশিষ্ট বিশেষ্য সর্বাপেক্ষা বেশি দেখা যায়। বিশেষ্যর সঙ্গে ট্যাক্সোনমিক ডেরিভেশনাল সাফিক্স (অনুসর্গ) যুক্ত থাকে যাদের অর্থ মানুষ, পাখি, পুরুষ, নারী, শিশু ইত্যাদি হতে পারে। ফলবাচক ‘সি’, ফলবাচক ‘ওয়া’ ইত্যাদি বিভিন্ন অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়। দ্বিত্ব বা বহুত্ব বোঝাতে বিশেষ কয়েকটি অনুসর্গ ব্যবহার করা হয় যথা ‘নিফি’ (দুই), ‘পাকি’ (বহু) ইত্যাদি। সর্বনামের ক্ষেত্রে স্বাধীন ব্যাক্তিবাচক সর্বনাম এবং অনুসর্গযুক্ত পজেসিভ সর্বনামের ব্যবহার দেখা যায়। এই ভাষায় দুই প্রকার ক্রিয়ার কাল সূচিত করা হয়- অতীত এবং অনতীত (নন পাস্ট)। অনেকসময় অনতীতটি প্রোগ্রেসিভ অর্থাৎ ঘটমান প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে কম্পাউণ্ড ভার্ব অর্থাৎ যৌগিক ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। সাধারণ অনতীত অনেক সময় শুধুমাত্র নঞর্থক রূপ পরিগ্রহ করে।

গ্রন্থপঞ্জী :