আঙ্গামী ভাষা
আঙ্গামী ভাষা সিনো-তিব্বতীয় ভাষাগোষ্ঠীর আঙ্গামী-পচুরি শাখার একটি ভাষা যা মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত নাগাল্যান্ড রাজ্যের একটি ভাষা। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ার জেলায় মূলত চা শ্রমিক হিসেবে এদের পরিযান ঘটে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে আঙ্গামী ভাষা ১৫২৭১৬ জনের মাতৃভাষা, যাদের অধিকাংশ নাগা পার্বত্য অংশে বসবাস করে।
আঙ্গামী ভাষার মূল প্রকারগুলির মধ্যে তেনিদিয়ে, কেয়হো, জুয়ো ইত্যাদি প্রধান। তেনিদিয়ো প্রকারভেদটি আঙ্গামী ভাষার মান্য প্রকার হিসেবে গণ্য করা হয়। এই প্রকারটি ব্যবহার করেই আঙ্গামী ভাষার সাহিত্য রচনা করা হয় এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও এই প্রকারটি ব্যবহৃত হয়। কেয়হো প্রকারভেদটি দক্ষিণ আঙ্গামী অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়, যা চোকরি ও খেজহা প্রকারভেদের (চাখেসাং গোষ্ঠী) সঙ্গে পারস্পরিক বোধগম্যতার সূত্রে আবদ্ধ। আঙ্গামী ভাষার অন্যান্য প্রকারভেদগুলির মধ্যে চাক্রোমা, মিমা, নালি, মোজোমে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আঙ্গামী ভাষায় ৬টি স্বরধ্বনি এবং ১৪টি ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে যেগুলির মধ্যে স্টপ, অ্যাফ্রিকেট, ফ্রিকেটিভ, ন্যাসাল, অ্যাপ্রক্সিমেণ্ট ইত্যাদি ধ্বনি রয়েছে। ডিপথং এর অস্তিত্ব থাকলেও বেশিমাত্রায় উপলব্ধ নয়। আঙ্গামী ভাষার ব্যাকরণ মূলত তেনিদিয়ে এবং ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। মূলত ১৮৭০ থেকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা এই ভাষার ডকুমেণ্টেশনের কাজ শুরু হয়েছিল যাদের ইনফরম্যান্ট সম্পর্কে মেটাডেটা লিপিবদ্ধ করা হয়নি। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আঙ্গামী-ইংরেজি-হিন্দি ত্রিভাষিক অভিধানটি পাওয়া যায়। আঙ্গামী ভাষার লিখিত সাহিত্যের নিদর্শন মূলত তেনিদিয়ে প্রকারে লিখিত খ্রিস্টান ধর্মীয় সাহিত্য। এর মূল কারণ হলো, নাগাল্যাণ্ডে বসবাসকারী আঙ্গামী ভাষা ব্যবহারকারী মানুষজনের অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে আঙ্গামী ভাষার তেনিদিয়ে প্রকারে বাইবেল প্রকাশিত হয়। যদিও এতে রসেট্টা প্রোজেক্টের অংশ হিসেবে বাইবেলের ‘জেনেসিস’ অংশটিই অনুদিত হয়েছে। এছাড়া তেনিদিয়ে তে লিখিত আঙ্গামী-নাগা উপকথা ও গানের সংকলন রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে কোহিমার স্কুল কলেজে তেনিদিয়ে প্রকার শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে টেক্সট বইও আঙ্গামী ভাষায় লেখা হচ্ছে।
গ্রন্থপঞ্জী :
Blankenship, Barbara; Peter Ladefoged; Peri Bhaskarrao; Nichumeno Chase (June 1993). Phonetic Structures of Khonama Angami. Fieldwork Studies of Targeted Languages. UCLA Working Papers in Phonetics.
Census of India, 2011.