সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়াতে টুলু জনজাতির মধ্যে ধান ও নারকেলের চাষ জনপ্রিয়। এদের লৌকিক সাহিত্যেও ধান ও নারকেল উৎপাদনের নিদর্শন রয়েছে। টুলু সমাজ হলো ম্যাট্রিলিনিয়াল অর্থাৎ মাতৃকুলভিত্তিক। এই ব্যবস্থা ‘অলিয়সান্ত্বনা’ নামে পরিচিত। ব্রাহ্মণ এবং বিশ্বকর্মা ছাড়া অন্য জাতির মধ্যে কাকা থেকে ভাইপোতে উত্তরাধিকার পরিবাহিত হয়। এদের নববর্ষের উৎসব ‘বিশু পর্ব’ নামে পরিচিত। এরা জনজাতি হিসেবে মূলত প্রকৃতি পূজা করে থাকে। ‘নাগ দৈবা’, ‘পৃথিবী মা’ ইত্যাদি দেবতা এবং কিছু ভূত বা আত্মার উপাসনা এই জনজাতির মধ্যে প্রচলিত। ‘কেদ্দসা’, ‘ভূত কলা’, ‘নেমা’ ইত্যাদি বিভিন্ন রীতি এরা পালন করে। এই ঐতিহ্য ‘ভূতারান্ধে’ নামে পরিচিত। এদের প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে এই ভূত বা আত্মাগুলিরও দেবতাদের মতোই নিজস্ব বসবাসের জায়গা অর্থাৎ ‘ভূতস্থান’ রয়েছে। এই আত্মাগুলি কোনো পশুরও হতে পারে, যেমন- ‘পাঞ্জিরলি’ অর্থাৎ শুকর এবং ‘পিলি ভূত’ অর্থাৎ বাঘ ইত্যাদি। মানুষও এই জনজাতির মধ্যে দেবতা হিসেবে পূজা পেতে পারে, যেমন ‘গুলিগা দৈবা’ এবং ‘স্বামী কোরাগাজ্জা’।
আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে এই জনজাতি ‘আতি অমাবস্যা’ পালন করে। ‘পালে’ গাছের ছাল থেকে এক বিশেষ মিশ্রণ তৈরি করা হয় এবং অন্যান্য মশলার সাথে এটি মিশিয়ে পানীয় হিসেবে পান করা হয়। এই পানীয়ের ভেষজ গুণ রয়েছে বলে এই জনজাতি বিশ্বাস করে। পৃথিবী মা তথা মৃত্তিকার উপাসনা ‘কেদ্দাসা’ নামে পরিচিত। এটি চারদিন ধরে পালন করা হয়, এবং উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জমিকে বিশ্রাম দেওয়া হয়, অর্থাৎ চাষের কাজ বন্ধ রাখা হয়। ‘সারনাড্ডে’ নামক বিশেষ রান্না করে পৃথিবী মাতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়।
টুলু জনজাতির খাবারেও ব্যাপক বৈচিত্রের দেখা পাওয়া যায়। এদের প্রধান খাদ্য হলো ‘নীর ধোসা’, ‘কোরি রুটি’, ‘পাত্রোদে’, ‘গোলি বাজে’, ‘গাঞ্জি ভোনাস’ ইত্যাদি। ‘নাঙ্গেল মিন্দা’ নামে বিশেষ একপ্রকার চাটনিও এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের আদি বাসিন্দা হওয়ার কারণে কৃষি ছাড়াও সমুদ্রবাণিজ্যে এদের আগ্রহ ছিল। এদের প্রাচীন লোককথা এবং লিখিত সাহিত্যের নিদর্শনগুলিতেও ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রার উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে টুলু জনজাতির ভাষাটির কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। তবে এদের জনাধিক্য, প্রাচীন ঐতিহ্য এবং ভৌগোলিক বিস্তারের কারণে ‘টুলু নাড়ু’ নামে একটি পৃথক প্রদেশ গড়ে তোলার দাবি বহুদিন ধরে রয়েছে এবং এটিকে একটি নতুন প্রশাসনিক অঞ্চল রূপে গড়ে তোলার চেষ্টা হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এই অঞ্চল ‘পরশুরাম সৃষ্টি’ নামেও পরিচিত। তবে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন প্রনয়নের পর পৃথক ‘টুলু নাড়ু’ আন্দোলন জোরদার হয়েছে।
লিপির অস্তিত্ব, মৌখিক সাহিত্যের বিকাশ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয়গুলি এই ভাষাটির পুনরুজ্জীবনের সহায়ক। তবে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তামিল, কন্নড় ও মালায়লম প্রভৃতি ঐতিহ্যশালী, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও প্রাচীন দ্রাবিড় ভাষার প্রচলন থাকায় এই ভাষার প্রসার সম্ভব হয়নি। স্কুল-কলেজের পাঠক্রমেও এই ভাষার ব্যাপক অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ভারতীয় আর্য, তিব্বত-বর্মীয় ও অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাসমূহের আধিক্য এবং ঘনসন্নিবিষ্ট টুলু জনবসতির অভাবে ভাষাটির ব্যবহার অত্যন্ত কম।
Bhat, S.L. A Grammar of Tulu: a Dravidian Language.
Briegal, J.A. A Grammar of Tulu Language
Census of India 2011
Caldwell, R.A. A Comparative Grammar of the Dravidian or South-Indian family of languages. Longdon: Harrison
Kumar, Shiva. 2020 Tulu Nadu India: A Cultural Guide by a Local