হাওড়া জেলা
ভারতের গ্লাসগো’ নামে পরিচিত হাওড়া জেলা পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সী বিভাগের অন্তর্গত একটি অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত জেলা। এই জেলার পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ও হুগলি নদী, উত্তরে হুগলি জেলা, দক্ষিণে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা এবং পশ্চিমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অবস্থিত। এই জেলা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম জেলা, যার আয়তন ১৪৬৭ বর্গকিমি। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে হাওড়া জেলার মোট জনসংখ্যা ৪৮৫০০২৯ জন এবং জনঘনত্ব ৩৩০০ জন/ বর্গকিমি। প্রধানত পাট ও কার্পাস বয়ন শিল্প এবং অন্যান্য ভারি শিল্প এই জেলার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে হাওড়া জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা (৮৫ শতাংশ)। এছাড়া প্রধানত হিন্দি (১১ শতাংশ) এবং উর্দু (৩ শতাংশ)। এছাড়া হাওড়া জেলায় ০.০৮ শতাংশ সাঁওতাল জনজাতির মানুষ বসবাস করে যাদের প্রধান ভাষা সাঁওতালি। এছাড়া স্বল্পসংখ্যায় কুরুখ ভাষার মানুষ বসবাস করেন। এই চারটি ভাষাই পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান সরকারি কাজে ব্যবহৃত ভাষা এবং এই ভাষাগুলিতে নিজস্ব লিপি ও লিখিত সাহিত্য বর্তমান। সরকারি ভাষা হওয়ায় এই ভাষাগুলিতে লেখাপড়ারও সুযোগ রয়েছে। হাওড়া জেলায় ব্যবহৃত বাংলা প্রধানত কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মান্য চলিত বাংলা যা ‘রাঢ়ী’ নামে পরিচিত। হাওড়া জেলার শহরাঞ্চল শিল্পোন্নত হওয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য এখানে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে তেলুগু, তামিল, সিন্ধি, গুজরাটী, মালায়লম প্রভৃতি ভাষাভাষী মানুষজন পরি্যানের মাধ্যমে এখানে বসতি স্থাপন করেন। এই কারণে হাওড়া জেলায় ভারতের সরকারি ভাষাগুলির একটি সমন্বয়ের ক্ষেত্র গড়ে ঊঠেছে। হাওড়া জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর দর্দিক শাখার ভাষা কাশ্মীরি এবং ফার্সি ভাষার মানুষ রয়েছেন। এছাড়া স্বল্প সংখ্য্যায় তিব্বত-হিমালয় শাখার ভাষা ভুটিয়া এবং তিব্বত-বর্মীয় শাখার মেচ ভাষার মানুষের বসবাস রয়েছে। এছাড়া কোঙ্কনী, মারাঠি, মৈথিলি ইত্যাদি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বংশের উত্তর পশ্চিম শাখার ভাষার মানুষ হাওড়া জেলায় বসবাস করেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের পাশাপাশি অবস্থানের ফলে হাওড়া জেলায় একটি সহজাত দ্বিভাষিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। হাওড়া জেলার সিন্ধি ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে এই দ্বিভাষিক প্রবণতা সর্বাধিক। মালায়লম ও কাশ্মীরি ভাষার মানুষজনের মধ্যেও এই দ্বিভাষিক প্রবণতা বর্তমান। তবে হাওড়া জেলার অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষী মানুষজন দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি এবং হিন্দির ব্যবহারে আগ্রহী। জনজাতির ভাষা ব্যবহারকারী সাঁওতালি ও ওঁরাও সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। গ্রামীণ জনসংখ্যার চেয়ে হাওড়া জেলায় শহরাঞ্চলে অধিবাসীর সংখ্যার আধিক্যের কারণে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো একএকটি পৃথক জনজাতি সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব হয়নি।
