তাংখুল ভাষা
তাংখুল ভাষা মূলত ভারতের মণিপুর রাজ্যের একটি জনজাতির ভাষা যা সিনো-তিব্বতীয় ভাষাগোষ্ঠীর তাংখুলিক শাখার অন্তর্গত। তাংখুলিক শাখার মধ্য উপশাখার ভাষা হলো মান্য তাংখুল। এছাড়া নাগাল্যাণ্ড রাজ্যেও এই জনজাতির মানুষ বসবাস করে। পশ্চিমবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলের জেলাগুলিতে আরো বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীগুলির সাথে মিশ্রিত অবস্থায় এবং রাজধানী কলকাতায় এই জনজাতির মানুষ বসবাস করে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জনজাতির মোট জনসংখ্যা ১৪০০০০ হলেও পশ্চিমবঙ্গে এদের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও নীচে।
মণিপুরের উখরুল জেলার হুন্দুং, সিরোল, লিতান, লামলাং গেট ইত্যাদি গ্রামের মানুষ তাংখুল ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষার তিনটি প্রকার (ভ্যারাইটি) রয়েছে- উখরুল, কুপোমে ও ফাদাং। ভাষাটির নিজস্ব কোন লিপি নেই, ল্যাটিন লিপি ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য নাগা ভাষাগুলির সাথে তাংখুল ভাষার কোন আপাত সংযোগ নেই। এটি একটি ডায়ালেক্ট কণ্টিনিউয়াম হিসেবে অবস্থান করে। উখরুল প্রকারটি সেতু ভাষা (লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই প্রকারটিতেই আমেরিকান ব্যাপটিস্ট মিশনারি রেভারেণ্ড উইলিয়াম পেটিগ্রিউ বাইবেল অনুবাদ করেছেন। কুপোমে প্রকারটি ‘লুহুপা’ নামেও পরিচিত। অন্যান্য তাংখুলিক শাখার ভাষার মধ্যে সোমরা, আকায়ুং আরি, কাচাই, হুইশু, তুসোম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এই ভাষাতে কতকগুলি বিশেষ ধ্বনি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা প্রোটো-তিব্বত-বর্মীয় সময়কালে ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। ‘স’>’থ’, ‘ৎস’>’স’ এবং ‘ৎসয়’>’ৎস’। এদের মধ্যে প্রথম পরিবর্তনটি ব্যাপকতর; এবং তাংখুল-নাগা ছাড়িয়ে অন্যান্য নাগা ভাষাতেও এই পরিবর্তনটি লক্ষ্য করা যায়। অন্যান্য কুকিচীন এবং মেইতেই ভাষাতেও এই পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। তাংখুল ভাষায় উপসর্গ ও ধাতুর মধ্যে ‘ভয়েসিং ডিসিমিলেশন’ এর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাংখুল ভাষায় কিছু উপসর্গ ধাতুকে ক্রিয়ারূপ থেকে বিশেষ্যরূপে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। তাংখুল ভাষাতে কেবলমাত্র ধাতুই স্ট্রেস বহন করে। কোন উপসর্গ কক্ষনো স্ট্রেস বহন করতে পারে না। কোন একটি ‘ফুট’ বা শব্দের ক্ষেত্রে ‘আয়াম্বিক’ বা ‘এনাপেস্টিক’ স্ট্রেস প্যাটার্নটিই বেশি দেখা যায়; অর্থাৎ, স্টেমটিতে মূল ধাতুটি ভারি অক্ষর (সিলেবল) বহন করে; অপর একটি বা দুটি হালকা (লাইট) অক্ষর (সিলেবল) ভারি সিলেবলটিকে অনুসরণ করে। অনুসর্গগুলিতে কোন স্ট্রেস থাকে না। উপসর্গ মধ্যস্থ স্বরধ্বনি মূলত মিড-সেণ্ট্রাল স্বর হয়। তাংখুল ভাষার ক্রিয়ার অন্তস্থ উপসর্গ সর্বদা লো-টোন বহন করে। সংখ্যাবাচক উপসর্গগুলির সাধারণত কোন অর্থ নেই।
গ্রন্থপঞ্জী :
Census of India-2001.
Khamrang, Khayaipam. (2000) “The Tangkhul Naga Tribe between Tradition and Modernity”.
Freiberg University Press, Switzerland.
Mortensen, David. (2003) “Comparative Tangkhul” University of California, Berkeley.