মারাম ভাষা

মারাম ভাষা হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের একটি ভাষা যা মূলত মণিপুর এবং অসম রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ার জেলার কিছু অংশে বসবাসকারী মারাম জনজাতির মানুষ ব্যবহার করেন। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে মারাম ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৭০০০। এই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপির অস্তিত্ব নেই, লেখার কাজে ল্যাটিন ও রোমান লিপি ব্যবহার করা হয়।

মারাম ভাষা মূলত একটি মৌখিক ভাষা। অঞ্চলভেদে এই ভাষার প্রকারগুলির মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। প্রচলিত এই প্রকারগুলির মধ্যে ন্যূনতম পারস্পরিক বোধগম্যতা থাকলেও এই প্রকারগুলি স্থানভেদে বেশ কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। মণিপুর রাজ্যের মারাম-খুল্লেন নামক গ্রামে প্রচলিত প্রকারটিকেই মারাম ভাষার মান্য প্রকার হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে স্থানভেদে ভাষারূপের বিভিন্নতা থাকলেও মণিপুর, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মারাম জনজাতির মানুষের মধ্যে প্রচলিত লোককথাগুলির মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। মারাম জনজাতির শিশুরা এই ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত হলেও এই ভাষার ব্যবহার ‘ডোমেন-স্পেশিফিক’, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। বর্তমানে মারাম ভাষার বিলুপ্তির আশঙ্কা না থাকলেও ভাষাটির ক্ষেত্র সম্প্রসারণের অভাব ভাষাটির ভবিষ্যৎ বিলুপ্তির কারণ হতে পারে। নাগা পার্বত্য অঞ্চলে আও, আঙ্গামী, চাঙ প্রভৃতি অপর নাগা জনজাতিগুলির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় বসবাসের ফলে এবং এদের দ্বিভাষিক ও ত্রিভাষিক প্রবণতার কারণে জাতিগোষ্ঠীর ভাষাগুলির মধ্যে ভাষাগত বৈশিষ্ট্যজনিত দূরত্ব ক্রমশ কমছে। এর ফলে মারাম ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পক্ষে অনুকূল প্রতিবেশ সৃষ্টি হচ্ছেনা। এই ভাষা একটি ‘টোনাল’ ভাষা, এতে তিনটি পৃথক টোন- ফলিং, রাইজিং ও ফলিং-রাইজিং বর্তমান। মারাম সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্যের অভাব থাকায় এদের ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায় না। এই ভাষা প্রথমিক স্কুল পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এর কোনো প্রাইমারের অস্তিত্ব নেই।

গ্রন্থপঞ্জী :

Census of India- 2011

Census of India- 2001

Census of India- 2001

Joseph, A. 1992; Maram Nagas, a socio-cultural study

Maram; www.ethnologue.com

Namkung, J. (1996). Phonological inventories of Tibeto-Burman languages.

Stephen, A. 2020; Problems of Higher Education among Maram Naga Tribal Women: An Empirical Study; Journal of Critical Reviews