পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

রেংমা সংস্কৃতি

স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী রেংমা এবং লোথা-এই দুটি জনজাতি পূর্বে একটি একক এবং বৃহত্তর জনজাতির অংশ ছিলো। রেংমা জনজাতি দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত- পূর্বী এবং পশ্চিমা। পার্বত্য অঞ্চলের জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসের কারণে এদের মধ্যে চিরাচরিত প্রথায় কৃষিকাজের পরিবর্তে পাহাড়ের গাইয়ে ধাপ কেটে চাষ, ঝুমচাষ ও টেরেস কালটিভেশন অর্থাৎ বাড়ির ছাদে কৃষিকাজের প্রথা রয়েছে। এদের মধ্যে সামাজিক পদমর্যাদা অনুযায়ী পোশাক পরার রীতি প্রচলিত রয়েছে। যে পুরুষ কখনও প্রানীহত্যা করেনি অথবা গ্রামবাসীদের ভোজ-এর দ্বারা আপ্যায়িত তার জন্য নির্ধারিত পোশাক হলো সাধারণ পোশাক অর্থাৎ ‘রিখো’। এটি হলো কালো পাড়যুক্ত সাদা পোশাক। এছাড়া অপর একটি সাধারণ পোশাক হলো ‘ময়েত-সু’ যা সাধারণত যুবকরা পরিধান করে। এছাড়া এদের মধ্যে ‘তেরি-ফিকেতসু' নামক এক বিশেষ প্রকার শাল গায়ে দেওয়ার প্রথা রয়েছে, যা মূলত বিশেষ উৎসব বা শিকারের সময় পরা হয়। ফসল তোলার পর রেংমা জনজাতি যে উৎসব পালন করে তা ‘নাগাদা' নামে পরিচিত। এই উৎসব ফসলের মরসুমের শেষে মূলত নভেম্বর মাসের শেষদিকে ৮দিন ধরে পালন করা হয়। গ্রামের প্রধান পুরোহিত অর্থাৎ ‘ফেসেংগু' এই উৎসবের দিন ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে মানুষের মৃত্যুর পর মৃতদেহকে সমাধি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। এদের নিজস্ব প্রাচীন ধর্ম হলো অ্যানিমিজম ভিত্তিক ধর্ম যেখানে টোটেম উপাসনার প্রথা রয়েছে। তবে ব্রিটিশ শাসনকালে খ্রিস্টান মিশনারিদের আগমনের পর থেকে এদের মধ্যে ব্যাপটিস্ট খ্রিস্টান ধর্ম প্রাধান্য লাভ করে। এদের সমাজ প্রধানত পেট্রিলোকাল ও পেট্রিলিনিয়াল এবং বেশ কয়েকটি গোত্র ও উপগোত্রে বিভক্ত। এদের মধ্যে ক্ল্যান-এক্সোগ্যামি প্রচলিত, অর্থাৎ দুই ভিন্ন গোত্রভুক্ত পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিবাহই স্বীকৃত। সম্পত্তির উপর মহিলাদের কোনোপ্রকার উত্তরাধিকার রেংমা সমাজে স্বীকার করা হয় না। বিবাহের সময় কন্যাপণ দেওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এদের সমাজে মনোগ্যামি অর্থাৎ একগামীতাই স্বীকৃত।

রেংমা জনজাতির মানুষ মূলত দ্বিভাষিক অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিভাষিক। রেংমা ছাড়াও নাগামিজ, মণিপুরি, ইংরেজি, অসমিয়া এবং বাংলা ভাষাতেও এরা পারদর্শী। মূলত লেখাপড়া এবং কাজের সুযোগসুবিধার কারণে এরা সরকারি ভাষাগুলির ব্যবহারে অধিক আগ্রহী। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ফোলে এদের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক ও প্রাচীন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য-সবক্ষেত্রেই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ধর্মীয় আচার-আচরণের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি প্রকট। এই ভাষার নিজস্ব লিপি না থাকলেও রোমান এবং নাগামিজ ও ইংরেজি ভাষায় অনূদিত বাইবেল এদের মধ্যে জনপ্রিয়। এরা নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপের সময় রেংমা ভাষা ব্যবহার করলেও অপর কোনো জনজাতির মানুষের সঙ্গে কথা বলতে সরকারি ভাষাগুলিই ব্যবহার করে। এদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ যুবক, কিশোর ও শিশুদের মধ্যে কোড-সুইচিং ও কোড-মিক্সিং এর প্রবণতা বেশি। এই সমস্ত কারণে অন্যান্য ভাষা থেকে রেংমা ভাষায় শব্দ লোন-ওয়ার্ড হিসেবে আগমনের হারও বেশি। এই ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি লিপিবদ্ধ করা অথবা রেংমা ভাষার ব্যাকরণ রচনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এসব কারণেই রেংমা জনজাতির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি ক্রমশ বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে।

গ্রন্থপঞ্জী:

Southern Rengma; www.ethnologue.com

Census of India- 2011

Longmailai, M. 2019. A Study of Tenselessness in Rengma (Western); Languages