বোড়ো জনজাতি অর্থনৈতিকভাবে মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। ধান, পাট, সুপারি ইত্যাদির চাষ এবং শুকর ও অন্যান্য গবাদি পশু পালনও এদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান উপায়। বোড়ো জনজাতি অসম রাজ্যের সর্ববৃহৎ এথনোলিঙ্গুইস্টিক গ্রুপ হলেও বোড়োল্যান্ডের বাইরে অসমের অন্যান্য অংশে এবং পার্শ্ববর্তী পশিমবঙ্গেও এদের তেমন কোনো ঘনসন্নিবিষ্ট জনবসতি দেখা যায় না। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে এই জনজাতি তফশিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত; এবং এরা মূলত দ্বিভাষিক। বোড়ো জনজাতি নিজভাষা বোড়ো ছাড়াও অসমীয়া ভাষায় পারদর্শী। বোড়ো জনজাতির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ হিন্দুধর্ম এবং বাকি ১০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করে। এদের নিজস্ব জনজাতির দেবতা বাথৌ, সিজৌ, মাইনাও, মাইরং এবং আগরাং ছাড়াও এরা হিন্দুধর্মের শিব, দুর্গা, কালী, কৃষ্ণ ইত্যাদি দেবতার উপাসনা করে থাকে। এদের নিজস্ব প্রাচীন ধর্ম হলো বাথৌ। এই ধর্মের প্রধান দেবতা হলেন ‘ওবোংলাওরে’। ‘সিজৌ’ নামক গাছকে এই দেবতার প্রতীক হিসেবে উপাসনা করা হয়। বোড়ো ভাষায় ‘বা’ শব্দের অর্থ হলো পাঁচ এবং ‘থৌ’ শব্দের অর্থ হলো গভীর। যেহেতু বোড়ো জনজাতি দেবতার ভিতর পাঁচটি উপাদানের অস্তিত্ব স্বীকার করে- জল, মাটি, বায়ু, আগুন ও আকাশ; তাই পাঁচ সংখ্যাটি বোড়ো সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাথৌ ধর্মের প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, সৃষ্টির পুর্বে এক বিশাল মহাশূণ্যে এদের সৃষ্টিকর্তা ‘ওবোংলাওরে’ অথবা ‘অহম গুরু’ অবয়বহীন অবস্থায় অবস্থান করতেন। একাকীত্ব কাটানোর উদ্দেশ্যে তিনি মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তু ও উদ্ভিদ সৃষ্টি করেন। বোড়ো জনজাতি কতকগুলি ‘আরোই’ অর্থাৎ গোত্রে বিভক্ত, যথা- স্বরগিয়ারি, বসুমাতারি, নার্জারি, মুসাহারি, গয়ারি, ওয়ারি, দইমারি ইত্যাদি।
বোড়ো জনজাতির নিজস্ব সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে কিছু বিশেষ নাচ ও গানের প্রচলন রয়েছে। এদের প্রধান ঐতিহ্যশালী নৃত্য হলো ‘বাগুড়ুম্বা’। এছাড়া ১৫-১৮ প্রকারের ‘খেরাই’ নাচ যথা- ‘রণচণ্ডী’, ‘গোরাই-দাবরাইনাই, ‘দাও থুই লগনাই’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এদের ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘খাম’, ‘সিফুং’, ‘সেরজা’, ‘থারখা’, ‘বিংগি’, ‘রেগে’ ইত্যাদি। বোড়ো জনজাতির প্রধান পালিত উৎসব হলো ‘বিসাগু’, যা প্রতি বছর এপ্রিল মাসে অর্থাৎ বসন্তকালে পালিত হয়। অন্যান্য উৎসবগুলির মধ্যে ‘হাপসা’, ‘হাতারনাই’, ওয়াংখাম’, ‘জানাই’, ‘দোমাসি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই জনজাতির প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো ‘আরোনাই’, অর্থাৎ একপ্রকার ওড়না, যা পুরুষ ও মহিলা উভয়েই ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ‘দোখোনা’ নামে এক বিশেষ পোশাক কেবলমাত্র বোড়ো জনজাতির মহিলাদের পরিধানের জন্য নির্দিষ্ট। তবে আধুনিক সভ্যতার বিকাশ ও পশ্চিমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বোড়ো জনজাতির নিজস্ব ভাষা-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি ক্রমশ অবলুপ্ত হচ্ছে।
Brahma, P. 2014; Phonology and Morphology of Bodo and Dimasa: A Comparative Study (PhD)
Census of India- 2011
Das, K; Mahanta, S. 2019 Intonational Phonology of Bodo; Glossa: A Journal of General Linguistics.
Kachary, G.B. 2017; Material Culture of the Bodos: a descriptive analysis (PhD). Guahati University
Sharma, Dr. S. K. et al. A Wordnet for Bodo Language: Structure and Development