কোম ভাষা

কোম ভাষা হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের কুকি-চিন শাখার উত্তর-পশ্চিম উপশাখার একটি ভাষা, যা মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বে মণিপুর রাজ্যে প্রচলিত হলেও নাগাল্যান্ড, অসম ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের তরাই- ডুয়ার্স অঞ্চলের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার রাজ্যে বিচ্ছিন্নভাবে এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষ বসবাস করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষা ১৫১০৮ জন ব্যবহার করেন। পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষাটির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রচলিত থাডৌ, হমার, ভাইপেই, সিমতে, পাইতে ইত্যাদি ভাষার আংশিক সাদৃশ্য বর্তমান। কোহলরেং প্রকারটিকে কোম ভাষার একটি প্রকার বলে মনে করা হলেও এটি একটি সম্পূর্ণ পৃথক ভাষাও হতে পারে। মণিপুর রাজ্যের যে ২২টি গ্রামকে কোম ভাষার মানুষের বাসভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের নামের সঙ্গে ‘কোম’ শব্দটি যুক্ত রয়েছে।

কোম একটি কুকি-চিন ভাষা হলেও নাগাল্যান্ডের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত ইনপুই নামক ভাষার সঙ্গে বিশেষ্য ও ক্রিয়ার রূপগত দিক থেকে এর সর্বাধিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এটি একটি টোনাল ভাষা এবং এতে তিনটি প্রধান ইনটোনেশন অর্থাৎ রাইজিং, ফলিং ও ফলিং-রাইজিং এর অস্তিত্ব রয়েছে। কোম ভাষার মান্য রূপটি ‘কোম-তোং’ নামে পরিচিত, যা সাহিত্য এবং গণমাধ্যমে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া অন্য রূপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘মোংতাং’, ‘মোইরাং’, ‘মানতাক’, ‘খারাম’, ‘সাগাং’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘মোংতাং’ প্রকারটি ‘কোম-তোং’ এর সর্বাধিক নিকটবর্তী। কোম ভাষায় ১২টি স্বরধ্বনি ও ২টি ডিপথং এর অস্তিত্ব রয়েছে। এই ভাষায় ৩০টি ব্যঞ্জনধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে। ইংরেজি থেকে কোম ভাষায় বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছে। সাপিরো এবং শিফম্যান (১৯৮৩) এর মতে, ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের রাজ্যগুলির দুর্গমতার কারণে এখানে প্রচলিত জনজাতির ভাষাগুলি সম্পর্কে প্রামাণ্য কাজের অভাব রয়েছে। গ্রিয়ারসন (১৯০৪) কোম ভাষাকে ‘ওল্ড কুকি’ শ্রেণিভুক্ত করেছেন, যে শ্রেণির অন্যান্য ভাষাগুলি হলো রাংখোল, বেতে, হালাম, লাংরোং ইত্যাদি। বেনেডিক্ট (১৯৭২) এবং এগেরনোড (১৯৭৪) এর শ্রেণিবিভাগে কোম ভাষাকে পৃথক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে গবেষকদের মধ্যে এই ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে যে কোম হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাগোষ্ঠীর তিব্বত-বর্মীয় (কুকি-চিন) শাখার একটি ভাষা।

গ্রন্থপঞ্জী :

Census of India, 2011.

Devi, Ch. Sarajubala. 2011. Linguistic Ecology of Kom; In Singh, S.K. (ed.) Linguistic Ecology of Manipur. Guwahati: EBH Publishers.

Kom, K.T. 2009 A DESCRIPTION OF THE KOM SPEECH WITH SPECIAL EMPHASIS ON VARIATION, The Department of Linguistics, NEHU.

Singh, C.Y. 1995;The Linguistic Situation in Manipur; Linguistics of the Tibeto-Burman Area.