পাইতে ভাষা
পাইতে ভাষা সিনো-তিব্বতিয় ভাষাগোষ্ঠীর কুকি-চিন-নাগা শাখার কুকি-চিন উপশাখার ভাষা। গ্রিয়ারসনের মতে কুকি-চিন শাখার উত্তর চিন উপশাখার অন্তর্গত হলো পাইতে ভাষা। এই ভাষা প্রধানত ভারতের আসাম, মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অংশে দার্জিলিং, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রচলিত। এই ভাষাটির সঙ্গে হমার, ভাইপেই, কোম, গাঙতে ইত্যাদি ভাষা নিকট সম্পর্কে আবদ্ধ। পাইতে ভাষার প্রকারগুলির মধ্যে বুকপি, দাজপাল, ডিম্পি, লামজাং, সাইজাং, তেলজাং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের মোট সংখ্যা ৭৮৭২৫ জন। টি ভাইফুং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম পাইতে ভাষার বর্ণমালা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। এই বর্ণমালার সঙ্গে রোমীয় বর্ণমালার সাদৃশ্য রয়েছে। পাইতে ভাষায় ১৮টি ব্যঞ্জনধ্বনি এবং ৬টি স্বরধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে। এই ১৮টি ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে ৬টি গ্লটাল স্টপ, ৪টি ফ্রিকেটিভ, ২টি ন্যাসাল এবং ১টি ল্যাটারাল ব্যঞ্জনধ্বনি। পাইতে বর্ণমালার এই সংস্করণটি ‘পাইতে লাইমাল’ নামে পরিচিত, যা ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল অবধি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া পাইতে ভাষায় ১০টি ডিপথং এর অস্তিত্ব রয়েছে।
পাইতে ভাষায় ১ থেকে ১০ এবং ১০০, ৫০০, ১০০০ ইত্যাদি সংখ্যার পটত্যেকটির জন্য পৃথক শব্দ রয়েছে। এই ভাষার সাধারণ পদক্রম হলো কর্ম-কর্তা-ক্রিয়া, অর্থাৎ এই ভাষায় কর্ম বাক্যের আদিতে বসে। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর ভাষাগুলির মতো কর্তা বাক্যের প্রথমে বসে না। এই পদক্রম নির্দিষ্ট, কোনভাবে এর ব্যাতিক্রম ঘটলে বাক্যের অর্থ হারিয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে এই ভাষা পড়ানোও হয়। ফলে এই জনজাতির প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ পাইতে ভাষা জানেন। বর্তমানে মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় হিসেবে পাইতে ভাষা পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ভাষাটির চর্চা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্রন্থপঞ্জী :
Census of India, 2011
Ousangvualnam, Liang. 2010 Community Organization of Paite Tribe Wordpress
Chemjong, I.S. “History and Culture of the Kirat”.
Singh, C.Y. 1995 The Linguistic Situation in Manipur, Linguistics of the Tibeto-Burman Area 18
Singh, N.S. 2006 A Grammar of Paite, Mittal Publishers