ভূমিজ ভাষা
ভূমিজ ভাষা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বসবাসকারী মুন্ডা জনজাতির অন্তর্গত ভূমিজ গোষ্ঠীর মানুষ ব্যবহার করেন। এছাড়া ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্বতন সিংভূম জেলা, মানভূম, হাজারিবাগ, রাঁচি ও ধানবাদে ভূমিজ ভাষা ব্যবহারকারী মানুষজন বসবাস করেন। এদের ব্যবহৃত ভাষাটির নাম হলো ভূমিজ, যাকে মুন্ডারির একটি ডায়ালেক্ট অর্থাৎ প্রকার হিসেবে গণ্য করা হলেও বর্তমানে ভাষাতাত্ত্বিকরা এটিকে একটি সম্পুর্ণ পৃথক ভাষা হিসেবে গণ্য করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষা ব্যবহারকারীর মোট সংখ্যা ৮৭২০০০। এই ভাষা লেখার কাজে অল-অনল লিপি ব্যবহৃত হয়, যা মহেন্দ্রনাথ সরকার উদ্ভাবন করেন। এছাড়া দেবনাগরী, ওড়িয়া ও বাংলা লিপিও এই ভাষা লেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এই ভাষাটি পৃথক ভাষা হিসেবে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ভাষার মর্যাদা পেলেও এবং এই ভাষায় স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হলেও পশ্চিমবঙ্গ, বা ওড়িশা রাজ্যে সরকারি অথবা আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা পায়নি।
‘ভূমিজ’ কথার অর্থ হলো ‘মাটি থেকে যার জন্ম’। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে হার্বার্ট রিসলে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, সুবর্ণরেখা নদীর উভয়তীরে ভূমিজ জনগোষ্ঠীর বসবাস। তিনি বলেন যে, ভূমিজ জনগোষ্ঠীর পূর্ব শাখাটি কেবলমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাঁর মতে এরা ছিল মুন্ডা জনজাতিরই একটি অংশ, যারা পরিযানের মাধ্যমে আরো পূর্বদিকে সরে এসে অন্য মুন্ডা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র হারিয়ে ফেলে; এবং যখন এই এলাকায় জনজাতির বাইরের মানুষজনের আগমন ঘটে তখন তারা হিন্দু ধর্মের রীতিনীতিগুলিই অনুসরণ করতে থাকে। অন্যদিকে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের কাছাকাছি যারা রয়ে গিয়েছিল তাদের ভাষার সঙ্গে মুন্ডারি ভাষার যোগসূত্রটি বিচ্ছিন্ন হয়নি।
গ্রন্থপঞ্জী :
Census of India- 2011
Ghosh, Binoy. 1976 Paschim Banger Sanskriti, Part-1. Pp. 423-434, Prakash bhaban
Jengcham, S. Bhumij; National Encyclopedia of Bangladesh. Asiatic Society of Bangladesh
Ol Onal; omniglot
Risley, H.H. 1892. The Tribes and castes of Bengal; Secretariat Press