লাখের জনজাতি নিজেদের ‘মারা-চিন' নামে অভিহিত করলেও লুসাই পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য অধিবাসীরা এদের ‘লাখের’ নামে অভিহিত করে। এই শব্দটি এদের তুলা-উৎপাদন এবং তোলা অর্থাৎ মূল জীবিকাটির থেকে এসেছে। লুসাই জনজাতি তুলোর ফল থেকে তুলো নিজেদের হাত ব্যবহার করে তুলত; অন্যদিকে লাখের জনজাতি এই তুলো তোলার কাজে এক বিশেষ প্রকার লাঠি ব্যবহার করতো। ‘লা' শব্দের অর্থ হলো তুলো এবং ‘খের' শব্দের অর্থ হলো ‘লাঠির সাহায্যে তোলা’। ‘মারা' নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। সম্ভবত এই শব্দটি ‘মিরাং' শব্দ থেকে এসেছে। এই মিরাং জনজাতি, যারা পূর্ব এবং মধ্য মায়ানমার থেকে পরিযানের মাধ্যমে মিজোরামে প্রবেশ করে, তারা রাখং অথবা মারা নামে পরিচিত।
মারা অথবা লাখের জনজাতির আদি বাসস্থান হিসেবে মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত "মারা অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল"নামক অঞ্চলটি স্বীকৃত। লাখের জনজাতি মোট ৬টি শ্রেণিতে বিভক্ত, যার মধ্যে আবার অনেকগুলি গোত্র ও উপগোত্র রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান তিনটি শ্রেণি হলো লোংসাই, হাথওয়াই এবং সাবেউ। এরা মূলত গ্রামকেন্দ্রিক ও কৃষিভিত্তিক জীবনযাপন করে। পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত এই সমস্ত গ্রামে প্রধানত ঝুমচাষের মাধ্যমে ভুট্টা ও মিলেট জাতীয় শস্যের চাষ করা হয়। এছাড়া সুপারি এদের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। এরা অন্যান্য পার্বত্য জনজাতির মতো যাযাবর জীবনযাপন করে না। এছাড়া লাখের জনজাতির মধ্যে বাঁশের ঝুড়ি তৈরির প্রচলন রয়েছে। চাষের কাজে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই সমানভাবে অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু বেশ কিছু কাজ রয়েছে যেগুলি কেবলমাত্র পুরুষ অথবা মহিলাদের জন্যই নির্দিষ্ট। যেমন- জঙ্গল থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, পশুপালন, রান্না ও সন্তানপালনের মতো কাজগুলি মহিলাদের এবং শিকার, তাঁতবোনা, বনজ সম্পদ সংগ্রহ ইত্যাদি কাজগুলি পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট। গ্রামের সমস্ত জমিরমালিকানা গ্রামের প্রধানের হাতে থাকে এবং তাঁর অনুমতিসাপেক্ষে গ্রামের মানুষ উক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পারে। এর বিনিময়ে গ্রামের প্রধানকে এক ঝুড়ি ধান (যা ‘সাবাই' নামে পরিচিত) দিতে হয়। এছাড়া জমি চাষ করার জন্য একপ্রকার বিশেষ খাজনা (যা ‘রাপাও' নামে পরিচিত) গ্রামপ্রধানকে দিতে হয়। বংশপরম্পরায় গ্রামের প্রধানের পদটি কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিবারের হাতেই থাকে। বয়স্কদের নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল অর্থাৎ গ্রামসংসদ শাসনকার্যে গ্রামের প্রধানকে সহায়তা করে।
এই জনজাতির নিজস্ব উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান ও পোশাকের ঐতিহ্য রয়েছে। লাই এবং মারা- এই দুই জনজাতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক অনেকাংশে একই। এদের নিজস্ব দুটি পোশাক হলো ‘ফিফিয়া' এবং ‘চাইলাও পোহ’। এছাড়া পশু শিকারের পর এক বিশেষ প্রকার গান এই জনজাতির মানুষ গেয়ে থাকে, যা ‘হ্লাদ-ও’ নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মাধ্যমে পশু শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে এই জনজাতির প্রাচীন শিকারের প্রথা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এদের নিজস্ব প্রাচীন অ্যানিমিস্ট ধর্ম এবং টোটেম উপাসনার প্রথা হ্রাস পাচ্ছে। এদের ভাষা লাখের মূলত মৌখিক উপভাষা হওয়ার ফলে এদের ভাষাতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি ভাষাসমূহের ব্যাপক প্রভাবে এই ভাষা মিজোরামের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও স্কুলের পাঠক্রমে স্থান পায়নি।
Census of India- 2011
Chhuanawma, L.H. 2020. Ethnic Affinities between Pawi (Lai) and Lakher (Mara) Tribes. www.ijcrt.org
Lakher; ENCYCLOPEDIA.COM
Lorrain, R.A. 1951. Grammar and dictionary of the Lakher or Mara language. Dept. Of Historical and Antiquarian Studies, Govt. of Assam.
Mara; www.ethnologue.com
Zohra, Dr. K. An Introductory notes to Mara District of South Mizoram, India