কোল ভাষা হলো অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর উত্তর-মুন্ডা শাখার খেরওয়াড়ি উপশাখার একটি ভাষা, যা মূলত পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা, ঝাড়খণ্ড রাজ্য এবং বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার কিছু অংশে বসবাসকারী কোল জনজাতির মানুষ ব্যবহার করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে কোল ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের মোট সংখ্যা ১৬৬০। এই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি নেই, মূলত মুন্ডারি ভাষার লিপিই লেখার কাজে ব্যবহার করা হয়। এরা মূলত মধ্যভারত থেকে পরিযানের মাধ্যমে পূর্ব ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের এই সমস্ত জায়গায় চলে আসে।

কোল ভাষা মুন্ডারি, হো এবং ভূমিজ ভাষার সঙ্গে নিকট সম্পর্কে আবদ্ধ। এই ভাষাগুলিতে প্রধানত একটি বৃহত্তর অস্ট্রো-এশিয়াটিক শব্দভাণ্ডারের শব্দগুলিই ব্যবহৃত হয়। ‘কোল’ শব্দটিও মুন্ডারি ভাষার শব্দ ‘কো’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘তারা এবং অন্যান্যরা’। এই ভাষায় মুন্ডারি ভাষার মতোই ৫টি স্বরধ্বনি বর্তমান; যাদের মধ্যে আবার হ্রস্ব, দীর্ঘ ও নাসিক্য- এই তিন প্রকার অ্যালোফোন রয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে, স্বরের দৈর্ঘ্য ও তার নাসিক্যীভবন বৈশিষ্ট্য পরস্পর কনট্রাস্টিভ ডিস্ট্রিবিউশনে থাকে না। ব্রড প্রোনানশিয়েশন অন্যান্য অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষার মতো কোল ভাষারও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মুক্ত মনোসিলেবলের দৈর্ঘ্য রুদ্ধ মনোসিলেবলের চেয়ে বেশি। কোল ভাষায় ২৩টি ব্যঞ্জনধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে, যার মধ্যে স্টপ, ন্যাসাল, ফ্রিকেটিভ, অ্যাপ্রক্সিমেন্ট ও ট্যাপ ধ্বনি বর্তমান। কনসোনেন্ট ক্লাস্টার কেবলমাত্র শব্দের শুরুতে বসতে পারে। কোল ভাষা মন-খেমের গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার ফলে এখানে টোন এর কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও এই ভাষার সুনির্দিষ্ট ইনটোনেশন প্যাটার্নের অস্তিত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে কোল ভাষা মুন্ডারি ভাষাকে অনুসরণ করেছে। এই ভাষায় মডিফায়ার বিশেষ্যের পূর্বে বসে। ‘কোড়া’ ও ‘কুড়ি’ শব্দ পুরুষ ও মহিলার মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কোল শব্দভাণ্ডারে সম্পর্কসূচক শব্দ অর্থাৎ ‘কিনশিপ টার্মস’ গুলি ‘বাইল্যাটারাল’ প্রকৃতির, অর্থাৎ এখানে বাবা, বাবার ভাই এবং মায়ের ভাই- এই তিন প্রকার সম্পর্ককে তিনটি পৃথক শব্দের সাহায্যে বোঝানো হয়। এছাড়া কোল শব্দভাণ্ডারে প্রজন্মের পার্থক্যকে সূচিত করার জন্যও পৃথক পৃথক শব্দ রয়েছে। এই কিনশিপ টার্মসগুলি প্রকৃতিগতভাবে ডিনোটেটিভ।

গ্রন্থপঞ্জী :