পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

আতং সংস্কৃতি

আতং জনজাতির সমাজ ম্যাট্রিলিনিয়াল হলেও পিতৃতান্ত্রিক। বিবাহিত মহিলাদের বড়ো দাদারাই পারিবারিক ক্ষেত্রে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই বড়ো দাদারা আতং সমাজে একত্রে ‘চারা’ নামে পরিচিত। সবচেয়ে বড়ো দাদা আতং সমাজে ‘চারামং’ নামে পরিচিত। আতং সমাজ বয়স, প্রজন্ম এবং বিবাহসম্পর্ক- এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে হায়ারার্কিতে অবস্থান করে। অবিবাহিত পুরুষ ও মহিলাদের থেকে বিবাহিতরা অধিকতর সম্মানজনক জায়গায় অবস্থান করে। এই সমাজে শিশু ‘সাগরাই’, অবিবাহিত পুরুষ ‘বানথাই’, অবিবাহিত মহিলা ‘নাওমিল’, বিবাহিত পুরুষ ‘মেয়াফা’ এবং বিবাহিত মহিলা ‘মেয়ামা’ নামে পরিচিত। গারো সমাজের মতোই আতং সমাজে ‘ক্রস-কাজিন ম্যারেজ’ অর্থাৎ তুতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহের প্রথা প্রচলিত রয়েছে।

এরা মূলত গ্রামকেন্দ্রিক জীবন যাপন করে। আতং সমাজের ঘরবাড়িগুলি কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মীত হয়, যা ‘নোক’ নামে পরিচিত। বাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত জমিটি ‘নোক-হাপ’ নামে পরিচিত যা মূলত একটি সমতল ভূমি। দক্ষিণ গারো পার্বত্য অঞ্চলের জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় মূলত জঙ্গল কেটে ধান ও অন্যান্য ফসলের চাষই এদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায়। এছাড়া ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে এদের মধ্যে ‘ব্যাম্বুসুট’ এর ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। বৃষ্টি এবং জলসেচ ব্যবস্থার প্রতিকুলতার কারণে এরা ঝুমচাষ এবং স্থানান্তর কৃষিতেই অভ্যস্ত। বর্তমানে এদের সমাজের বেশিরভাগ অংশই খ্রিস্টান ধর্মের অনুগামী হলেও খ্রিস্টান ধর্মের আগমনের পূর্ববর্তী সময়ে এরা অ্যানিমিজমে বিশ্বাসী ছিল। ভগবান, আত্মা (মাইতে), ভূত (মেমাং) ইত্যাদির অস্তিত্বে আতং জনজাতির মানুষ বিশ্বাস করতো। আতং ভাষায় বজ্রের প্রতিশব্দ ‘গোইরা’ শব্দটি বজ্রের দেবতা ‘গোইরা’র নাম থেকে এসেছে। এদের প্রধান দেবতা ‘বাবাইরা’ এবং সূর্যদেবতা ‘সালজং’ নামে পরিচিত। এদের নিজস্ব পালিত উৎসবের মধ্যে ‘মাইদান-সাইলা-তোকা’ উল্লেখযোগ্য, যা প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষে অথবা নভেম্বর মাসের শুরুতে আতং জনজাতি পালন করে থাকে। বর্তমানে এদের অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী হওয়ার ফলে এদের বিবাহের রীতিনীতির সমস্ত অংশই প্রোটেস্টান্ট চার্চের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ধর্মীয় এবং সামাজিক জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গারো ভাষার সর্বাত্মক প্রাধান্য, শিক্ষা ও কাজের সুযোগের আধিক্য ইত্যাদি কারণে আতং জনজাতি দ্বিভাষিক হলেও গারো ভাষা ক্রমশ এই জনজাতির প্রধান ভাষার স্থান গ্রহণ করছে। আতং জনজাতির নিজস্ব ভাষা বর্তমানে নির্দিষ্ট কয়েকটি ডোমেনে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে বার্তালাপের সময় ব্যবহার করা হয়। গারো, কোচ, রাভা ইত্যাদি ভাষা থেকে আতং ভাষায় প্রতিনিয়ত বহু শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং নিকটবর্তী অঞ্চলে প্রচলিত এই ভাষাগুলি আতং ভাষার বাক্যগঠন পদ্ধতিকেও প্রভাবিত করছে। বাংলা, অসমীয়া এবং অন্যান্য সরকারি ভাষা থেকে আগত শব্দগুলিও বেশিরভাগ আতং শব্দের স্থান গ্রহণ করছে। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় আতং ভাষা ‘সিভিয়ারলি এণ্ডেঞ্জারড’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।

গ্রন্থপঞ্জী:

Atong; www.ethnologue.com

Census of India-2011

Sangma, T.B. 2017; A Lexical Comparison of A.we, Am.beng and Atong, Dialects of Garo; IOSR Journal

Van Breugel, S. 2008; A Grammar of Atong; PhD Thesis, La Trobe University