পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি পূর্বতন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাকে ভেঙে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়। এই জেলার দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে ওড়িশা রাজ্য; উত্তর ও পশ্চিমপ্রান্তে পুর্ব মেদিনীপুর জেলা এবং পূর্বে হুগলি নদী ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা অবস্থিত। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি এবং পূর্ব উপকূলীয় সমভূমির অন্তর্ভুক্ত। এই জেলার মোট আয়তন ৪৭৩৬ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৫০৯৫৮৭৫ জন এবং জনঘনত্ব ১১০০ জন/বর্গকিমি। প্রধানত কৃষিপ্রধান এলাকা হলেও অনুর্বর লবণাক্ত মৃত্তিকায় খাদ্যশস্যের উৎপাদন কম হয়; কাজুবাদাম ও নারকেল উৎপাদনের উপর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা; তবে বাংলাভাষার মান্য চলিত রূপটি প্রধানত লেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই জেলার কথ্য বাংলা ভাষারূপটি মান্য চলিতের থেকে অনেকাংশে পৃথক, যাকে মান্যরূপ একটি পৃথক প্রকার (variety) বলা যেতে পারে। মান্য চলিত বাংলায় ব্যবহৃত ‘ছেলে’ শব্দটির বেশ কয়েকটি পৃথক রূপ ( যথা- ছেলে/ ছুয়া/কুনা/চানকা/ছ্যানা/টকা) ইত্যাদি স্থানভেদে সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রচলিত। এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ওড়িশা রাজ্যের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে ওড়িয়া ভাষাটিও প্রচলিত। বাংলা ও ওড়িয়া- দুটি ভাষাই পাশাপাশি অবস্থিত দুটি রাজ্যের সরকারি ভাষা হওয়ায় এই ভাষাগুলিতে লেখাপড়া ও অন্যান্য সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। বাংলা এবং ওড়িয়া দুটি ভাষাই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ভারতীয়-আর্য শাখার পূর্বী উপশাখার দুটি পৃথক বিভাগ (বঙ্গ-অসমিয়া এবং ওড়িয়া) থেকে উৎপন্ন হয়েছে, যাদের পৃথক লিপি বর্তমান।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সাঁওতাল, লোধা এবং ওঁরাও জনজাতি বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। মেদিনীপুর জেলার বিভক্তকরণের সময় জেলাটির জনজাতি অধ্যুষিত অধিকাংশ এলাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় স্থান পায়। ফলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় নিরবচ্ছিন্ন জনজাতির বসবাস গড়ে ওঠেনি। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়েরর মধ্যে জনজাতির মানুষজন দেখা যায়। সাঁওতালি ভাষা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর উত্তর মুণ্ডা শাখার অন্তর্ভুক্ত একটি অন্যতম প্রধান আঞ্চলিক ভাষা, যার অলচিকি নামে নিজস্ব লিপি রয়েছে। কুরুখ ভাষা দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীর উত্তর দ্রাবিড় শাখার অন্তর্ভুক্ত, যার সঙ্গে ব্রাহুই ও মালতো নামে অপর দুটি দ্রাবিড় ভাষার নিকট সম্পর্ক রয়েছে। এই ভাষার নিজস্ব লিপি ‘তোলং সিকি’ নামে পরিচিত। তবে এই জনজাতিগুলি পূর্ব মেদিনীপুরের নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় ঘনসংঘবদ্ধ না হওয়ায় একটি পৃথক ভাষা সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। বাংলা ও ওড়িয়া ভাষার মেদিনীপুরীয় প্রকার (শব্দভাণ্ডার ও বাকরীতি) এবং জনজাতির ভাষার সংমিশ্রণের মাধ্যমে একটি মিশ্রভাষার সৃষ্টি হয়েছে।