রাজবংশী ভাষা

রাজবংশী কোচ-রাজবংশী গোষ্ঠীর ভাষা, ভারতবর্ষে অসম, বিহারের কিছু অংশে এবং উত্তরবঙ্গে এই গোষ্ঠীর বসবাস। এছারাও নেপালের পূর্বভাগে এবং বাংলাদেশের উত্তরভাগে এই গোষ্ঠীদের বসবাস করতে দেখা যায়।

বর্মণ (P.L.S.I,২০১৭) বর্তমানে রাজবংশী ভাষাভাষী জেলাগুলিকে চিহ্নিত করেছেন, জা হলো নেপালের ঝাপা ও মোরং, বিহারের কিষাণগঞ্জ, কাটিহার ও পূর্ণিয়া, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, অসমের কোকরাঝড়, ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও এবং গোয়ালপাড়া এবং বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং বগুড়ার কিছু অংশ।

১৯৯১-এর সেনসাস রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতবর্ষে ২,৮৩৯,৪৮১ সংখ্যক রাজবংশি ভাষী বসবাস করেন। পিপ্লাই (২০০৭)বলেছেন সরকারিভাবে, পশ্চিমবঙ্গে রাজবংশী ভাষাকে বাংলার একটি উপভাষা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং অসমে এটিকে অহমীয়া ভাসার উপভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়। গ্রিয়ারসন(১৯০৩, খন্ড-৫, ভাগ-১) রাজবংশীকে উত্তরবঙ্গীয় উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই ভাষাকে রংপুরী বা কামতাপুরী বলেও পরিচিত। বর্মণ(২০১৭) কামরূপে প্রাচীনকালে ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। কাজেই ঐতিহাসিকভাবে এই ভাষা একটি ইন্দো-আর্য ভাষা কিন্তু রাজবংশী ভাষীদের সঙ্গে টিবেটো-বার্মান জনগোষ্ঠীর সরাসরি যোগ আছে। সেক্ষেত্রে এইথভাষাকে টিবেটো-বার্মান ভাষা হিসেবেও গণ্য করা উচিত কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে। এই নিয়ে একটি বিস্তর বিতর্ক আছে।

ভাওয়াল(২০১৫) এই বিষয়ে বলেছেন , ১৮৭০ সালে হওয়া ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সরকারের সেনসাস রিপোর্ট অনুযায়ী রাজবংশী এবং কোচদের এক গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার পর থেকেই এই বিতর্কের উদ্ভব।

ওয়াইল্ড(২০০৮) এই বিষয়ে বলেছেন, রাজবংশী একটি ইন্দো-আর্য ভাষা এবং এই ভাষায় ব্যবহৃত নাউন ক্লাসিফায়ার অনার্য ভাষার প্রভাবে ঘটেছে যা বাংলা এবং অহমীয়া ভাসাতেও লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও টিবেটো-বার্মান ভাষার কিছু প্রভাব এই ভাষার ব্যাকরণে দেখা যায় কিন্তু তা অন্যান্য ইন্দো-আর্য ভাষাতেও দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে রাজবংশী ভাষায় মৈথিলী ভাষার প্রভাব দেখা যায়, তার কারণ হিসবে ওয়াইল্ড (২০০৮) ভাষা দুটির ভৌগোলিক অবস্থানকে প্রধানত দায়ী করেছেন। নেপালের সঙ্গে ভারতবর্ষের সীমানা অঞ্চলে যেহেতু রাজবংশী ভাষাভাষী মানুষের বসবাস তাই এই প্রভাব থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। কামতাপুরী বা রাজবংশী ভাষা প্রাচীনকালে খুব ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সরকারি তথ্য অনুযায়ী এটি একটি উন্নয়নশীল ভাষা।

রাজবংশী গোষ্ঠীদের রীতিনিতি, উৎসব, পার্বণ ইত্যাদি অনেকটাই ইন্দো-আর্য গোষ্ঠীদের মতন হলেও কিছু দেবদেবী, উৎসব প্রাচীন এবং অনার্য।

যেহেতু এই ভাষাকে বাংলাভাষার উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ভাষা কোনো বিদ্যালয়ে শেখানো হয় না।(পিপ্লাই,২০০৭)

বর্মণ (২০১৭) উল্লেখ করেছেন কামতাপুরী বা রাজবংশী ভাষার নিজস্ব হরফ আছে এবং বর্তমানকালে সুজন বর্মণের লেখা ‘কামতাপুরী অভিধান’ যা ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে তা এই হরফে লেখা। রাজবংশী ভাষায় মোট ৭টি স্বরধ্বনি, ২৭টি ব্যাঞ্জনধ্বনি, ১১টি যৌগিকস্বর এবং ২টি অর্ধস্বর আছে। এই ভাষাতে পদপ্রকরণ পাঁচপ্রকার- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় এবং ক্রিয়া। বিশেষ্যর রূপভেদ তিন প্রকার, লিঙ্গ, বচন এবং, কারকবিভক্তি। ক্রিয়ার রূপভেদ পাঁচ প্রকার, কাল, ভাব, প্রকার, বাচ্য এবং পুরুষ।

রাজবংশী ভাষার বাক্যগঠন বাংলাভাষার মতন। এটি একটি কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া ভাষা। একটি উদাহরণ দেওয়া হলঃ

মুই বই পড়

আমি বই পড়ি

গ্রন্থপঞ্জী :

Bhawal, P. (2015). Evolution of Rajbanshi Society: A Historical Assessment. IOSR Journa ofl Humanities , 20 (10), 56-61.

Britannica, T. E. (n.d.). Koch People. Retrieved April 2020, from Britannica: https://www.britannica.com/topic/Koch

Burman, S. K. (2017). Rajbanshi/Kamtapuri. In G. Devi, S. P. Singha, & I. Acharya (Eds.), People's Linguistic Survey in India, Vol-31, Part-3 (pp. 396-418). Orient Black Swan.

Grierson, G. A. (1903). Linguistic Survey of India, VOL-5,Part-1. Calcutta: Office of the Superintendent of Goverment Publication.

Piplai, D. (2007). Where Children lose their language: The Endangered Linguistic Identity of the Rajbanshi Children North Bengal. Delhi: ww.cry.org.

Wilde, C. (2008). A Sketch of the Phonology and Grammar of Rajbanshi. University of Helsinki.