নাগা পাহাড়ের পাদদেশ অঞ্চলে এদের আদি বাসভূমি হওয়ার ফলে অনুর্বর মাটি এবং জলসেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে সাংতাম জনজাতি চিরাচরিত প্রথায় কৃষিকাজের পরিবর্তে শিফটিং-কাল্টিভেশন অর্থাৎ স্থানান্তর কৃষিতেই অভ্যস্ত। নাগাল্যান্ডের পার্বত্য এলাকায় এদের ঘনসন্নিবিষ্ট বসতি অর্থাৎ গ্রাম গড়ে উঠলেও পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় এদের কোনো নিজস্ব বসতি গড়ে ওঠেনি। চা এবং অন্যান্য কুটিরশিল্পের শ্রমিক হিসেবে সাংতাম জনজাতির পরিযান অর্থাৎ মাইগ্রেশনজনিত কারণে অন্যান্য জনজাতির সঙ্গে সহাবস্থানের বাধ্যতাই এর মূল কারণ। সাংতাম শব্দটি ‘সাংদাং’ শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে; যার অর্থ প্লাটফর্ম। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের অসম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিপোর্টে সর্বপ্রথম “সাংতাম” শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। সাংতাম জনজাতি ৬টি প্রধান গোত্রে বিভক্ত, যেগুলি সাংতাম ভাষায় ‘সুখ’ নামে পরিচিত। এই ৬টি প্রধান ‘সুখ’ হলো ‘য়িংফি সুখ’, ‘থিংগা সুখ’, ‘হুরোং য়িংফি’, ‘ফির-আহির’, ‘ফেলুংরে সুখ’ এবং ‘সাংফুরে সুখ’। সাংতাম জনজাতি হলো একমাত্র নাগা জনজাতি যাদের বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করলেও এরা এদের প্রাচীন অ্যানিমিস্ট উপাসনা পদ্ধতি এবং ধর্মীয় আচার-আচরণগুলি অবিকৃত অবস্থায় বজায় রেখেছে। এদের তিনটি প্রধান উৎসব হলো ‘মংমং’, ‘সোসু’ এবং ‘হুনাপুংবি’। ‘মংমং’ উৎসবটি প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে ছয়দিন ধরে পালিত হয়। এই ছ’টি দিনের প্রতিটির একটি নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে; যেমন, এই উৎসবের তৃতীয় দিনে গৃহদেবতা এবং রান্নাঘরে চুলা হিসবে ব্যবহৃত তিনটি পাথরের উপাসনা করা হয়। প্রধানত ভালো ফসল উৎপাদনই এই উৎসব পালনের মূল উদ্দেশ্য। ‘সোসু’ উৎসব ‘ভি থুং’ নামেও পরিচিত, যেটি প্রতি বছর মার্চ মাসে জমিতে ফসল বোনার আগে পালন করা হয়। গ্রামের পুরোহিত উপাসনার মাধ্যমে ফসলের চাষ এবং প্রকৃতির রোষ থেকে ফসলকে রক্ষা করার প্রার্থনা জানান। ‘হুনাপুংবি’ উৎসব প্রতি বছর অগস্ট মাসে শিশুদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। সাংতাম জনজাতির সমাজ পেট্রিলিনিয়াল ও পেট্রিলোকাল। এরা মোট ১৭টি এক্সোগ্যামাস গোত্রে বিভক্ত। প্রধান গোত্রগুলির মধ্যে ‘থোংরু’, ‘জিংরু’, ‘আনারু’, ‘লাংতি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই গোত্রের মাধ্যমেই সাংতাম জনজাতির পদবি নির্ধারিত হয়।
বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব ক্রমশ বাড়তে থাকায় এবং ইংরেজি, নাগামিজ, বাংলা, হিন্দিসহ অন্যান্য প্রভাবশালী সরকারি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে সাংতাম জনজাতির নিজস্ব ভাষিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এই জনজাতির ইতিহাসের কোনো প্রামাণ্য এবং গবেষণাধর্মী লিখিত তথ্য না থাকায় এর সংরক্ষণের কাজও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই জনজাতির নতুন প্রজন্ম ভাষাটি শিখতে আগ্রহী না হওয়ার ফলে ভাষাটির এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে সঞ্চারণের পথও রুদ্ধ হচ্ছে এবং ভাষাটি নির্দিষ্ট কিছু ডোমেনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইউনেস্কোর ভারতীয় বিপন্ন ভাষার তালিকায় সাংতাম ভাষা ‘ভালনারেবল’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।
Bouchery,P. & Sangtam, L. The KinshipTerminology of the Sangtam Nagas; European Bulletin of Himalayan Research
Census of India-2011
Coupe, A. R. 2020; Northern Sangtam phonetice, phonology and word list; Linguistics of the Tibeto-Burman Area
Sangtam; THE LAND OF CULTURE: TUENSANG; www.tuensang.nic.in