দাকপা ভাষা
দাকপা ভাষা হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত তিব্বত-কানাউরি শাখার পূর্ব-বোড়ো উপশাখার একটি ভাষা। এটি মূলত পূর্ব ভুটানের ট্রিসাংগাং জেলা, অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং জেলা, এবং পশ্চিমবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলের অন্তর্গত আলিপুরদুয়ার জেলায় দাকপা জনজাতির মানুষের মধ্যে প্রচলিত। ভ্যান দ্রিয়েম (২০০১) এই ভাষাকে ভুটানে প্রচলিত পূর্ব-বোড়ো শাখার ভাষাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ ভাষা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বামথাং ভাষার সঙ্গে এই ভাষার সাদৃশ্য থাকলেও SIL এর রিপোর্ট অনুযায়ী দাকপা ভাষা হলো ব্রোকপা ভাষার একটি ডায়ালেক্ট তথা প্রকার। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী, ভারতে দাকপা ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ৯১০০। দাকপা ভাষা মনপা ভাষার সঙ্গে পারস্পরিক বোধগম্যতার সূত্রে আবদ্ধ। এই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপির অস্তিত্ব নেই, লেখার কাজে তিব্বতী লিপিই ব্যবহার করা হয়।
দাকপা ও ব্রোকপা ভাষার মধ্যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কিছু মিল থাকলেও বেশ কিছু মূলগত পার্থক্য বর্তমান। এই পার্থক্যগুলি মূলত এই দুই জনজাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের নিরিখে নির্ধারিত হয়। ব্রায়ান হাউটন হজসন সর্বপ্রথম ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে দাকপা ভাষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। যেসমস্ত অধিবাসী সাংলা (Tshangla) ভাষা ব্যবহার করেন, তাদের কাছে দাকপা ভাষা ‘ব্রামি-লো' অথবা ব্রামি ভাষা নামে পরিচিত। আবার অরুণাচল প্রদেশে প্রচলিত উত্তর-মনপা ভাষাটিও দাকপা নামে এবং দুয়ারা (১৯৯০) এর মতে, স্থানীয়ভাবে ব্রামি ভাষা নামেও পরিচিত।
দাকপা ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের অভাব রয়েছে। তার ফলে এই ভাষার ফোনিমগুলির ট্রান্সক্রিপশন মূলত ফোনেটিক। দেজোঙ্খো এবং বামথাং ভাষায় প্রচলিত অনেক ফোনিম দাকপা এবং দাজলা ভাষাতেও খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বামথাং এবং দাকপা ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের বেশ কিছু পার্থক্য বর্তমান। দাকপা ভাষায় রোটিক ব্যঞ্জনধ্বনির আধিক্য রয়েছে, যা বামথাং ভাষায় খুঁজে পাওয়া যায় না। দেজোঙ্খো ভাষার মতো এই ভাষাতেও রেজিস্টার টোনের মিল দেখতে পাওয়া যায়। দুটি ভাষাতেই ‘বাইনারি ডিস্টিংশন’ নামক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় আছে। এই ভাষায় হাই রেজিস্টারের ক্ষেত্রে প্রিগ্লটালাইজড সিলেবল দেখতে পাওয়া যায় যার শুরুতে কন্টিনিউয়েন্ট ব্যঞ্জনধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে। শব্দের প্রথম অক্ষরের পূর্বে একটি ‘ চিহ্নের সাহায্যে এই বিষয়টি বোঝানো হয়। দাকপা ভাষায় দেজোঙ্খো ভাষার মতোই হার্ড ও সফট- শব্দের প্রথমে অবস্থিত এই দুই প্রকার ধ্বনির পার্থক্য স্বীকার করা হয়। এই বিষয়টি বোঝানোর জন্য শব্দের প্রথমে অবস্থিত ভয়েসড কনসোনেন্ট এর পরে একটি ‘ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। দাকপা ভাষায় ভুটানি ভাষার প্রাচীন বৈশিষ্ট্যগুলি, যেমন সেন্ট্রাল ভাওয়েলের ব্যাপক ব্যবহার ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায় না। বরং, দাকপার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রাচীন ভুটানি ভাষার তুলনায় নবীনতর। দাকপা ও দাজলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায় যে, দাজলা ভাষাতে পূর্ব-বোড়ো বৈশিষ্ট্যের প্রাধান্য থাকলেও দাকপা ভাষাতে মূলত সেন্ট্রাল-বোড়ো বৈশিষ্ট্যগুলিই প্রকট। তবে বাউণ্ড মরফিমের ক্ষেত্রে দাকপা ভাষায় পূর্ব-বোড়ো রুপটিই সংরক্ষিত হয়েছে। দাকপা ভাষার উপর সেন্ট্রাল-বোড়ো ভাষাগুলির প্রভাব বেশি এবং এই ভাষার লোনওয়ার্ডগুলির অধিকাংশ সেন্ট্রাল-বোড়ো ভাষাসমূহ থেকেই আগত। এরকম অনেক শব্দ দাকপা ও দাজলা- উভয় ভাষাতেই রয়েছে, যাদের রুট একই হলেও অর্থগত পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, দাকপা ভাষার উপর সেন্ট্রাল-বোড়ো ভাষাগুলির প্রভাব বেশি হলেও দাকপা একটি পূর্ব-বোড়ো ভাষা। এই ভাষার পার্সোনাল প্রোনাউন, নিউমেরিক সিস্টেম, শব্দভাণ্ডার ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পূর্ব-বোড়ো শাখার ভাষাগুলির মধ্যে দাজলা ও দাকপার মধ্যে নিকট সম্বন্ধ বর্তমান; এবং দাকপা ভাষা কখনও দাজলা ভাষার শুধুমাত্র একটি ভৌগোলিক প্রতিবেশী ভাষা নয়। এই দুই ভাষার নিউমেরিক সিস্টেম পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
Numerics | Dzala (দাজলা) | Dakpa (দাকপা) |
---|---|---|
1 | Thi | Thi |
2 | noi | leyi |
3 | Sum | Sum |
4 | bli | bli |
5 | lana | lena |
6 | gro | gro |
7 | ni | nis |
8 | get | get |
9 | dugu | dugu |
10 | ci | cih |
গ্রন্থপঞ্জী :
Dakpa; www.ethnologue.com
Census of India- 2011
Van Driem, G. 1993. Language Policy in Bhutan; SOAS, London
Van Driem, G. 2001. Languages of the Himalayas: An Ethnolinguistic Handbook of the Greater Himalayan Region. Brill Publishers
Graves, T.E. 2007 The Phonetics and Phonology of the Sherpa Language
Van Driem, G. 2007. Dzala and Dakpa from a coherent subgroup within Eastern Bodish, and some related thoughts; University of Bern. DOI: 10.1515/9783110968996.71