বাঙালি জনগণকে মূলত উপভাষার উপর ভিত্তি করে উপ-গোষ্ঠীতে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে – বাঙাল এবং ঘটি।

বাঙাল বলা হয় মূলত বাংলাদেশীদের এবং যাদের পূর্বপুরুষরা পূর্ব বাংলা থেকে উৎপন্ন হয়েছে তাদের। পূর্ব বাংলা উপভাষাগুলি বাঙ্গালী নামে পরিচিত। তারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও বরিশালের মূল ভূখন্ডের বাংলাদেশী অঞ্চল এবং নিম্ন আসাম ও ত্রিপুরার বাংলাভাষী এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। বাঙালদের মধ্যে চারটি উপগোষ্ঠী রয়েছে যা একটি (পূর্ব) বাংলা পরিচয় ছাড়াও স্বতন্ত্র পরিচয় বজায় রাখে। চট্টগ্রামবাসীরা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের (চট্টগ্রাম জেলা ও কক্সবাজার জেলা) অধিবাসী এবং তারা চট্টগ্রামীয় ভাষায় কথা বলে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কক্সবাজারের মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সিলেটিরা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ এবং ভারতের বরাক উপত্যকা থেকে উৎপন্ন হয় এবং তারা সিলেটি ভাষায় কথা বলে। পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা অন্য বাঙালিদের থেকে আলাদা করার জন্য নিজেদের ঘটি বলে।

ধর্মীয় অনুষঙ্গ ও আচার-আচরণের দিক থেকে বাঙালি একটি বৈচিত্র্যময় দল। বর্তমানে, প্রায় ৬৭% ইসলাম ধর্মের অনুসারী, যার একটি বৃহৎ হিন্দু সংখ্যালঘু এবং খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের একটি বড় সম্প্রদায় রয়েছে। বাঙালি মুসলমানরা, যারা প্রধানত বাংলাদেশে বাস করে, তারা মূলত সুন্নি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। বাঙালি হিন্দুরা, যারা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাস করে, তারা সাধারণত আঞ্চলিক দেবদেবীদের উপাসনা করার পাশাপাশি শক্তিম বা বৈষ্ণবধর্ম অনুসরণ করে। এছাড়াও অল্প সংখ্যক বাঙালি খ্রিষস্টান রয়েছে, যাদের একটি বড় অংশ পর্তুগিজ ভ্রমণকারীদের বংশধর, সেইসাথে বাঙালি বৌদ্ধ, যাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ও রাখাইনের বাংলাভাষী বড়ুয়াদের অন্তর্গত (যারা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত বাংলাদেশের অন্যান্য বৌদ্ধদের সাথে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়)।

বাঙালি বিবাহের মধ্যে অনেক গুলি আচার এবং অনুষ্ঠান রয়েছে যা বেশ কয়েক দিন ধরে চলতে পারে। যদিও মুসলিম এবং হিন্দু বিবাহের তাদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় আচার রয়েছে, তবে অনেকসাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ আচার রয়েছে। সমস্ত ধর্মের বাঙালি বিবাহে গয়ে হোলুদ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ইতিহাসের প্রতিটি বৃহৎ সংস্কৃতিগোষ্ঠীর মতো, বাঙালিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত এবং অবদান রেখেছে, বিশেষ করে শিল্প ও স্থাপত্য, ভাষা, লোককাহিনী, সাহিত্য, রাজনীতি, সামরিক, ব্যবসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

গ্রন্থপঞ্জী: