কলকাতা জেলা
কলকাতা জেলা প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্রতম জেলা; রাজধানী শহর কলকাতা এই জেলার অন্তর্গত। এটি নিম্ন গাঙ্গেয় উপতকায়, হুগলি নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। এই জেলার উত্তর ও পূর্বদিকে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা, দক্ষিণে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এবং পশ্চিমে হাওড়া ও হুগলি জেলা অবস্থিত। এই জেলায় কোনো গ্রামীণ এলাকার অস্তিত্ব নেই। এই জেলার আয়তন ১৮৫ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে কলকাতা জেলার মোট জনসংখ্যা ৪৪৯৬৬৯৪ জন এবং জনঘনত্ব ২৪০০০ জন/বর্গকিমি। প্রধানত ভারি ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে এই জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা এই জেলায় অবস্থিত হওয়ায় এখানকার চলিত বাংলা ভাষাকেই মান্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। এছাড়া শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠায় বহির্বাংলার রাজ্যগুলি থেকে জীবিকা অর্জনের জন্য প্রচুর মানুষের আগমন ঘটে। তাই কলকাতায় বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ভোজপুরি, উর্দু, ওড়িয়া, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, মারওয়ারী, নেপালি ইত্যাদি ভাষার ব্যবহারকারী মানুষজন রয়েছেন। উপরোক্ত ভাষাগুলির প্রত্যেকটিই ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিলের অন্তর্গত স্বীকৃত সরকারি ভাষা। এছাড়া, ১৯৪৭ এ দেশভাগ ও ১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সংখ্যায় বাস্তুহারা মানুষ কলকাতায় এসে মূলত দক্ষিণের টালিগঞ্জ, যাদবপুর, গড়িয়া অঞ্চলে কলোনী গড়ে তোলে; এই কারণে কথ্য বাংলা ভাষার ‘বঙ্গালি’ প্রকারটি কলকাতায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কলকাতা জেলায় পড়াশুনো ও সরকারি কাজের সুবিধা থাকায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে বাঙালি ও রাজবংশী ছাড়াও লেপচা, গোর্খা, মেচ প্রভৃতি জনজাতির মানুষ বসতি গড়ে তোলায় কলকাতায় এই সিনো-তিব্বতীয় ভাষাগুলিও ব্যবহৃত হয়। ঠিক একই কারণে মান্য চলিতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও দুই মেদিনীপুরে ব্যবহৃত বাংলার ব্যবহারও কলকাতায় প্রচলিত। এতগুলি ভাষা প্রকার ও স্বতন্ত্র ভাষার সহাবস্থানের কারণে কলকাতা জেলায় দ্বিভাষিক, এমনকি ত্রিভাষিক প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। এই দ্বিভাষিকতা বা ত্রিভাষিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই ভাষাগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলি পৃথক হলেও ‘কোড সুইচিং’ এবং ‘কোড মিক্সিং’ এর প্রবণতাও রয়েছে। শহরকেন্দ্রিক জেলা হওয়াতে কলকাতায় গ্রামীণ জনজাতির সাংস্কৃক বৈশিষ্ট্যগুলি বিকশিত হয়নি। মান্য বাংলা ও অন্যান্য সরকারি ভাষার ব্যবহারের প্রাবল্য, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকেন্দ্রিক পাঠক্রম ইত্যাদি কারণে কলকাতায় ভাষাগত বৈচিত্র্য থাকলেও জনজাতিগুলির স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
