পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

কোচবিহার জেলা

কোচবিহার জেলা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত, জলপাইগুড়ি বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এই জেলার উত্তরে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা, পূর্বে অসম রাজ্যের ধুবড়ি ও কোকড়াঝাড় জেলা, এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশে বাংলাদেশ। এই জেলা হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তরাই অঞ্চলের অংশবিশেষ। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে কোচবিহার জেলার জনসংখ্যা ২৮১৯০৮৬ জন এবং জনঘনত্ব ৮৩০ জন/বর্গকিমি। কোচবিহার জেলায় প্রাচীন রাজবংশী ক্ষত্রিয়, কোচ, রাভা, মেচ, গারো প্রভৃতি জনজাতির মানুষ বসবাস করেন।
কোচবিহার রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা হলেও কোচ জনগোষ্ঠির মানুষের নিজস্ব ভাষা রাজবংশী; যা কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং পার্শ্ববর্তী অসম রাজ্যের পশ্চিমাংশে বসবাসকারী কোচরা ব্যবহার করেন। রাজবংশী ভাষার চারটি প্রকার রয়েছে যথা- পশ্চিমা, পূর্বী, মধ্য ও পার্বত্য। এর মধ্যে ‘মধ্য’ (central) প্রকারটিতে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ কথা বলেন। এই প্রকারটিতে প্রকাশনাও ঘটেছে। তিনটি প্রকারের মধ্যে ৭৭ থেকে ৮৯ শতাংশ শাব্দিক সাদৃশ্য রয়েছে। পার্বত্য প্রকারটির মধ্যে অন্যান্য পার্বত্য জনজাতির ভাষার প্রভাব বেশি। রাজবংশী ভাষার পৃথক পরিচয় লাভের জন্য ‘কোচ-রাজবংশী সাহিত্য সভা’ চেষ্টা করে চলেছে।
রাজবংশী জনজাতি মূলত প্রকৃতির উপাসনায় বিশ্বাসী হলেও পরবর্তীকালে তারা হিন্দুধর্ম (শাক্ত ও বৈষ্ণব উভয়ই) গ্রহণ করে। বর্তমানে রাজবংশী জনজাতির মধ্যে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রভাবও লক্ষণীয়। রাজবংশী জনজাতির নিজস্ব গান, নাচ , কৃষিকাজ, গৃহনির্মাণের ঐতিহ্য বর্তমান। মূলত গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতির উপর এই জনজাতি নির্ভরশীল। আমিষ ও নিরামিষ উভয়প্রকার খাদ্যাভ্যাসই প্রচলিত। ঘোরদিঊ পূজাতে শুকর ও লক্ষ্মীপুজাতে হাঁস উৎসর্গের রীতি আছে। আয়তাকৃতি গৃহের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা থাকে। পাটানি, আগ্রান, অংশা, চাদর, লিফান, ফোটা ইত্যাদি কাপড় হাতে বুনে এই জনজাতির মানুষ ব্যবহার করে থাকে। কামতাপুরী লোকগীতি, ভাওয়াইয়া, চোরছুনি, পালাটিয়া, লাহাংকারি ইত্যাদি নিজস্ব সংগীতের ঐতিহ্য রাজবংশী জনজাতির নিজস্ব। দোতারা, সারিন্দা, বীণা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারও প্রচলিত। আধুনিক সভ্যতার বিকাশ ঘটলেও রাজবংশী জনজাতি তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণে আগ্রহী হওয়ায় রাজবংশী জনজাতির প্রাচীন রীতিনীতি, ভাষা, ধর্মীয় ঐতিহ্য এখনো বিলুপ্তপ্রায় হয়ে ওঠেনি।