জলপাইগুড়ি জেলা
জলপাইগুড়ি জেলার আয়তন পশিমবঙ্গের উত্তরাংশে তরাই-ডুয়ার্স পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত যার আয়তন ৩৩৩৬ বর্গকিমি। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জেলার জনসংখ্যা ২৩৮১৫৯৬ জন, যাদের ৩৭.৬৫ শতাংশ তফশিলি জাতি এবং ১৮.৮৯ শতাংশ তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর পূর্বাংশে ভূটান ও দক্ষিণে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাংশে দার্জিলিং জেলা, উত্তরে কালিম্পং ও পশ্চিমে আলিপুরদুয়ার জেলা অবস্থিত। এই জেলার অর্থনীতি মূলত চা-বাগান, বনজ সম্পদ ও পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
জলপাইগুড়ি জেলায় মূলত মেচ, রাভা, রাজবংশী, টোটো, লিম্বু ও লেপচা জনজাতির মানুষ বাঙালি ও নেপালি জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বসবাস করে। মূলত চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে বৃটিশ শাসনকালে এদের কাজে লাগানো হতো। মূলত এসব আদিবাসীরা জঙ্গলে বসবাস করলেও বৃটিশ সরকার বনাঞ্চলের উপর জনজাতির মানুষদের স্বাভাবিক অধিকার কেড়ে নিয়ে চা বাগানের সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এদের উচ্ছেদ করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ থেকে উদবাস্তু আগমনের কারণেও এদের নিজেদের এলাকা ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়। এছাড়া চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে বৃটিশরা ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে ওঁরাও, মুণ্ডা, মদেশিয়া, নাগেশিয়া প্রভৃতি জনজাতিকে জলপাইগুড়িতে নিয়ে এলে এখানকার প্রাচীন অধিবাসী জনজাতি ও নতুন জনজাতির সমন্বয়ে জলপাইগুড়িতে একটি মিশ্র উপজাতি সংস্কৃতি গড়ে ওঠে এবং একই সঙ্গে এই জনজাতি সমূহের নিজস্ব ভাষাগুলিও একে অপরের ভাষিক বৈশিষ্ট্যের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে একটি মিশ্র রূপ নেয়। জলপাইগুড়ি জেলার সরকারি ভাষা বাংলা, হিন্দি, নেপালি ও ইংরেজি হলেও জনজাতির মানুষেরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় নিজস্ব ভাষার ব্যবহার করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ওঁরাও জনজাতির ভাষা কুরুখ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। লেপচা ও লিম্বু ভাষা সিকিম রাজ্যে সরকারি ভাষার তকমা লাভ করার ফলে জলপাইগুড়ি তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে এই ভাষাদুটির সরকারি স্বীকৃতির দাবি উঠেছে। অন্যান্য ভাষাগুলির নিজস্ব লিপি না থাকলেও লিম্বু ভাষার নিজস্ব লিম্বু লিপির বিকাশ ঘটেছে এবং লিখিত সাহিত্যের উন্নতি ঘটছে। জনজাতির মানুষরা মূলত প্রকৃতির উপাসনা করলেও বর্তমানে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মের প্রভাব বাড়ছে। মিশনারিদের মাধ্যমে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষার বিকাশের কারণে জলপাইগুড়ি জেলার মিশ্র উপজাতি সংস্কৃতি ও ভাষা ক্রমশ বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে।
