নদিয়া জেলা
প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্গত নদীয়া জেলার আয়তন ৩৯২৭ বর্গকিমি। এই জেলার পূর্বে বাংলাদেশ, দক্ষিণে হুগলী ও উত্তর ২৪ পরগণা; উত্তরে মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিমে পূর্ব বর্ধমান জেলা অবস্থিত। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৫১৬৭৬০১ জন এবং জনঘনত্ব ১৩০০ জন/বর্গকিমি। কৃষিকাজ (ধান ও পাট উৎপাদন) এবং মৃৎশিল্প নদীয়া জেলার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
নদীয়া জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা হলেও হিন্দি ও সাদরি ভাষারও প্রচলন আছে। খারিয়া, মুণ্ডা, কুরুখ ইত্যাদি জনজাতি লিঙ্গুয়া-ফ্রাঙ্কা হিসেবে সাদরি ভাষা ব্যবহার করে। এটি একটি ভারতীয়-আর্য ভাষা পরিবারের বিহারি শাখার ভাষা। এই ভাষার নিজস্ব লিপির অভাবে দেবনাগরী, কাইঠি, ওড়িয়া, বাংলা ও অসমিয়া ভাষার লিপি ব্যবহৃত হয়। সাদরি ভাষা ঝাড়খণ্ডে সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। সাদরি ভাষা ঝাড়খণ্ডে বসবাসকারী সদন নামে একটি আর্য জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। এই ভাষা আসলে একটি কথ্য ভাষা কিন্তু পরবর্তীকালে এই ভাষার জনপ্রিয়তার ফলে এই ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু হয় এবং এই ভাষা লিপিবদ্ধ করা শুরু হয়। এই ভাষাতে বহু সাহিত্য চর্চা হয়েছে এবং নিউ টেস্টামেণ্ট নামে খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থ সাদরি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। নাত্তয়াঁ বিহান নামক একটি পত্রিকায় সাদরি কবিতা, নাটক ও কাহিনি বঙ্গানুবাদ সহ ২০১৯ সালে সুন্দরবন আদিবাসী শিক্ষক সমিতি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
PLSI খণ্ড ৩১ ভাগ ৩ (২০১৭) অনুযায়ী সাদরি ভাষার স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭টি এবং ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ২৯ টি। ক্ষেত্রমোহন সরকার ১৯৯৫ সালে তাঁর Ph.d. গবেষণা পত্রে ৬ টি স্বরধ্বনির কথা উল্লেখ করেছেন। এই স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ প্রকৃতি অনেকটা বাংলা আর হিন্দির মতন। এটি একটি সেতু ভাষা (lingua franca) হওয়ার কারণে এই ভাষায় loan words বা ধার করা শব্দের সংখ্যা বেশী। বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য আদিবাসী ভাষার অনেক শব্দ এই ভাষায় ব্যবহার করা হয়। সেতু ভাষা হওয়ার কারণে ওঁরাও, মুণ্ডা প্রভৃতি আদিম জনজাতির ভাষাগুলিকে সাদরি ভাষা ক্রমশ গ্রাস করছে। এই ভাষাটি বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ রক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরী হয়েছে; ফলে এই ভাষাটির ভাষিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয়।
