বানজারা জনজাতির আদি বাসস্থান হিসেবে রাজস্থানের মেওয়ার অঞ্চলকে মান্যতা দেওয়া হয় এবং এই অঞ্চলে বসবাসকারী রাজপুত জনজাতির সঙ্গে এদের সম্পর্কের কথা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকার করা হয়। এরা জাতিগতভাবে প্রধানত যাযাবর-বণিক সম্প্রদায় যারা লবণ তথা নুনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো। উনবিংশ শতকে ব্রিটিশদের আগমনের পর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ক্রিমিনাল-ট্রাইবস-অ্যাক্টের মাধ্যমে এই জনজাতিকে শবরদের মতোই অপরাধপ্রবণ জনজাতির তকমা দেওয়া হয়েছিলো। বর্তমানে এই জনজাতির উপর থেকে এই তকমা অপসারিত হলেও এখনও এদের ডিনোটিফায়েড ট্রাইব হিসেবেই গণ্য করা হয়। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং ওড়িশা রাজ্যে বানজারা জনজাতি তফশিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
বানজারা জনজাতির নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এদের একটি বিশেষ উৎসব হলো ‘তুলিজাভবানী’ এবং ‘মারিয়াম্মা' নামে দুই বিশেষ দেবীর উপাসনা। এদের নিজস্ব ভাষার কোনো লিপি না থাকার দরুণ এদের সংস্কৃতির কোনো লিখিত ইতিহাস নেই। এই জনজাতি সামাজিকভাবে বিশেষ কয়েকটি গোত্রে বিভক্ত। এই গোত্রগুলি এদের নিজেদের ভাষায় ‘জাঠ' নামে পরিচিত। এদের সমাজে দুটি বিভিন্ন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত নারী ও পুরুষ পরস্পর বিবাহসম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারে, অর্থাৎ এদের সমাজে আন্তর্গোত্র বিবাহ স্বীকৃত। বানজারা জনজাতির পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যেই গান, নাচ এবং সুতোর কাজের প্রচলন রয়েছে। এদের পালিত অপর একটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হল ‘তীজ’ (Teej) যা প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে পালিত হয়। এখানে প্রধানত অবিবাহিত বানজারা যুবতীরা উপযুক্ত স্বামী পাওয়ার জন্য প্রার্থনা জানায়। এই উৎসবে একটি বাঁশের তৈরি পাত্রে ফসলের বীজকে জল ও মাটি দিয়ে ভালোভাবে পালন করার পর যদি নির্দিষ্ট দিনে ওই বীজ থেকে ফসলের চারার জন্ম হয়, তবে বানজারা সমাজে তা শুভ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই বাঁশের পাত্রগুলিকে মাঝে রেখে বানজারা যুবতীরা উৎসবের দিন গান এবং নাচের অনুষ্ঠান করে থাকে। বানজারা জনজাতির বেশ কিছু নিজস্ব নৃত্যেরও ঐতিহ্য রয়েছে। এদের নিজস্ব নৃত্য ‘চারী' নামে পরিচিত। বানজারা জনজাতির সঙ্গে নিকট সম্পর্কযুক্ত অপর একটি জনজাতি রয়েছে যারা ‘গাজুগোনিয়া' নামে পরিচিত। সারঙ্গী নামক বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান গেয়েই এরা জীবিকা নির্বাহ করে। ধর্মীয় দিক থেকে বর্তমানে এরা প্রধানত হিন্দুধর্মকেই অনুসরণ করে। তবে জনৈক ঐতিহাসিক বানজারা জনজাতির ধর্মবিশ্বাসকে ‘অ্যাম্বিগুয়াস, টলালেন্ট ও সিনক্রেটিক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এদের সমাজে মূলত একগামীতাই প্রচলিত; বহুগামীতার দৃষ্টান্ত খুব একটা দেখা যায় না। এরা প্রকৃতিগতভাবে যাযাবর সম্প্রদায় হলেও প্রতি বছর জুলাই-অগস্ট মাসে অর্থাৎ বর্ষাকালে এরা কোনো একটি নির্দিষ্ট গ্রামে বসতি গড়ে তোলে। তবে ব্যবসার জিনিসপত্র বহন করার জন্য যোগাযোগব্যবস্থা ও যানবাহনের উন্নতির ফলে এদের চিরাচরিত যাযাবর প্রবৃত্তি বর্তমানে অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং এরা বাণিজ্যের পরিবর্তে কৃষিকাজকেই মূল জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।
বর্তমানে সরকারি ভাষা ব্যবহারে অধিক আগ্রহ, অন্যান্য ভাষার শব্দভাণ্ডার থেকে সরাসরি বহু শব্দের লামবাডি ভাষায় অনুপ্রবেশ,দ্বিভাষিকতা ও বহুভাষিকতা, ভাষা এবং সংস্কৃতির সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে লামবাডি ভাষার ব্যবহারের পরিসরটি ক্রমশ ছোটো হচ্ছে এবং এই জনজাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলিও ক্রমশ অবলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে।
Banjara Lifestyle and Community; 2020. International Research Journal of Multidisciplinary Scope
Census of India- 2011
Languages of Tamil Nadu: Lambadi: AN INDO-ARYAN DIALECT. Census of India-1961. Vol: 9.
Naik Mood, Dr. D. & Dhananjay, Dr. S. 2020. Gor Banjara - An Enduring Tribe. p. 263
Trail, R.L. 1970. The Grammar of Lamani