পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

আলিপুরদুয়ার জেলা

জলপাইগুড়ি জেলার অংশবিশেষ নিয়ে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন পশ্চিমবঙ্গের কুড়িতম জেলা হিসেবে আলিপুরদুয়ার জেলা আত্মপ্রকাশ করে। এই জেলার পূর্বে অসম রাজ্য, পশ্চিমে জলপাইগুড়ি জেলা ও দক্ষিণে কোচবিহার জেলা অবস্থিত। আলিপুরদুয়ার জেলার উত্তরে আন্তর্জাতিক ভুটান সীমান্ত। যেহেতু এই জেলা পূর্বে জলপাইগুড়ি জেলার অংশ ছিল, তাই তরাই-ডুয়ার্স পার্বত্য অঞ্চলের পার্বত্য উপজাতিসমূহের বসবাসের কারণে এই জেলার আশি শতাংশের বেশি অধিবাসী তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। এখানে রাজবংশী, রাভা, মেচ, মদেশিয়া, টোটো ইত্যাদি জনজাতির মানুষ জঙ্গল অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে বসবাস করে। বিভিন্ন জনজাতির সহাবস্থানের কারণে আলিপুরদুয়ার জেলায় ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিকাশ ঘটেছে।

রাজ্যসরকারি ভাষা হিসেবে আলিপুরদুয়ার জেলায় বাংলা ,হিন্দি ,ইংরেজি,নেপালিবোড়ো ভাষা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মেচ, টোটো, রাভা ইত্যাদি উপজাতিগুলির নিজস্ব ভাষা এই সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ব্যবহার করে। এই জনজাতির ব্যবহৃত ভাষাগুলিতে বর্তমানে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, নেপালি ইত্যাদি সরকারি ভাষা ক্রমশ প্রভাববিস্তার করছে। জনজাতির ভাষাগুলিতে যেহেতু লেখাপড়া এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগসুবিধা লাভের সুযোগ কম, তাই জনজাতির মানুষ সরকারি ভাষা ব্যবহারেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই কারণে উপজাতিগুলির নিজস্ব ভাষিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্টগুলি বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। টোটো, রাভা, মেচ প্রভৃতি জনজাতির শিশুরাও মাতৃভাষা হিসেবে তাদের নিজস্ব ভাষা না শেখার কারণে ক্রমশ জনজাতির ভাষাগুলির ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। এই ভাষাগুলিতে নিজস্ব লিপির প্রচলন না থাকাত লিখিত সাহিত্য ও ব্যাকরণ বইএর অভাব রয়েছে; যা ভাষাগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন করছে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সরকারি ভাষাগুলির প্রচুর শব্দ মেচ, রাভা ও টোটো ভাষায় ক্রমাগত অনুপ্রবেশ করছে; ফলে জনজাতির ভাষাগুলি তাদের নিজস্ব রূপগুলি হারিয়ে ফেলছে। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় মেচ ও রাভা ভাষাদুটি যথাক্রমে ‘সিভিয়ারলি এনডেঞ্জারড’ ও ‘ক্রিটিকালি এনডেঞ্জারড’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে। টোটো জনজাতি ও ভাষার পুনরুজ্জীবনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তত্ত্বাবধানে জনজাতির ভাষাগুলির অভিধান তৈরির কাজ চলছে। এই সমস্ত উদ্যোগ আলিপুরদুয়ার জেলার জনজাতির ভাষাবৈচিত্র্যের সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে।