পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

থাডৌ সংস্কৃতি

নাগা পার্বত্য অঞ্চলের জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় থাডৌ জনজাতির আদি বাসভূমি। মূলত কৃষিকাজ ও পশুপালনই থাডৌ জনজাতির প্রধান জীবিকা। থাডৌ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কৃষি ও পশুপালন- জীবনধারণের এই দুটি ক্ষেত্রেই পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সমান দায়িত্ব পালন করে। থাডৌ সংস্কৃতিতে চার প্রকার বিবাহের প্রচলন রয়েছে- চোংমৌ, সহপসাট, জোল-ইহা এবং কিজাম-মাং। চোংমৌ বিবাহ হলো সম্বন্ধ করে বিবাহ, যেখানে পুত্র ও কন্যার পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিবাহ স্থির করা হয়। বাকি তিনপ্রকার বিবাহই পালিয়ে গিয়ে অথবা বলপূর্বক বিবাহের নিদর্শন। থাডৌ সমাজে পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়ার অধিকার আছে এবং এই বিচ্ছেদের ঘটনা থাডৌ সমাজে বিরল নয়। এই সমাজে শিশুদের অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষালাভের উপর জোর দেওয়া হয়। থাডৌ সমাজের প্রধান দেবতা হলেন পাথেন। এছাড়া থাডৌ সমাজ বেশ কিছু অশুভ আত্মার উপস্থিতিতেও বিশ্বাস করে। এরা ঐতিহ্যগতভাবে জীবজন্তু ও প্রকৃতির উপাসনা করলেও আধুনিককালে এদের বেশিরভাগ অংশই নাগা পাহাড়ের অন্যান্য জনজাতির মতোই খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করে। বর্তমানে ইংরেজি ভাষা থেকে থাডৌ ভাষায় বাইবেলও অনুবাদ করা হয়েছে। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম থাডৌ-কুকি ভাষার প্রাইমারটি রচনা করা হয়।

থাডৌ জনজাতির মানুষের মধ্যে একটি সহজাত দ্বিভাষিক অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিভাষিক প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। এরা মণিপুর ও অসম রাজ্যে বসতি স্থাপনের ফলে উক্ত রাজ্যগুলির প্রধান সরকারি ভাষা মণিপুরি, অসমীয়া এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী থাডৌ জনজাতির মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহারের প্রবণতাও অত্যধিক। থাডৌ ভাষার কোনো সরকারি স্বীকৃতি না থাকার কারণে স্কুল-কলেজের পাঠক্রমেও ভাষাটি স্থান পায়নি। বর্তমানে এই ভাষাটি কেবলমাত্র বাড়িতে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার সময় এই জনজাতি ব্যবহার করে। এই জনজাতির শিশু ও যুবকদের মধ্যেও এই ভাষার ব্যবহারে আগ্রহ কম। সরকারি ও প্রধান ভাষার শব্দগুলি অনেকাংশে থাডৌ ভাষায় অনুপ্রবেশ করে এই ভাষার নিজস্ব শব্দভাণ্ডারকে সংকুচিত করছে। এই ভাষার ঐতিহ্য মূলত মৌখিক হওয়ার কারণে এই ভাষার ধ্বনিগত ও রূপগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্যের অভাব রয়েছে। এসব কারণে থাডৌ জনজাতির ভাষিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমশ অবনমন ঘটছে। ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় থাডৌ ভাষা ‘ভালনারেবল’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।

গ্রন্থপঞ্জী:

Census of India- 2011

Dattamajumdar, S. The Socio-Economics of Linguistic Identity: A Case Study in the Lushai Hills; Ph.D. dissertation

Pauthang, H. 2014. Word formation in Thadou; Himalayan Linguistics