পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

মেইতেই সংস্কৃতি

মেইতেই জনজাতির মানুষকে প্রধানত পূর্ব-এশিয় হিসেবে গণ্য করা হলেও এদের মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় প্রভাবও রয়েছে। স্যর জেমস জনস্টোনের মতে, মেইতেই জনজাতি নৃতাত্ত্বিকভাবে ইন্দো-চাইনিজ জনজাতির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া চীন এবং মায়ানমার থেকে ‘শান’ জনগোষ্ঠী মণিপুরে এসে বসতি স্থাপন করেছিলো। এছাড়া মণিপুর রাজ্যে ঘনসন্নিবিষ্টভাবে না হলেও উল্লেখযোগ্যভাবে বাঙালি এবং অসমিয়াদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এসব কারণে মেইতেই সংস্কৃতি একটি মিশ্র সংস্কৃতির রূপ গ্রহণ করেছে।

মেইতেই জনজাতির মধ্যে সাতটি প্রধান গোত্রের অস্তিত্ব রয়েছে, যেগুলি ‘সালাই তারেত’ নামে পরিচিত। এই গোত্রগুলি হলো- মাঙ্গাং, লুয়াং, খুমান, আংগম, মইলাং, খাবা-গানবা এবং সারাং- লেইসাংথেম। এই জনজাতির মধ্যে প্রচলিত সম্পর্কসূচক শব্দগুলি অ্যাফাইনাল এবং কনস্যাংগুইনাল- এই দুই প্রকারেরই হয়। মেইতেই জনজাতিতে প্রচলিত সম্পর্কগুলি মূলত তিনটি লেভেল এ কাজ করে- ক্ল্যান অর্থাৎ গোত্র, লিনিয়েজ এবং ফ্যামিলি অর্থাৎ পরিবার। মেইতেই ভাষায় মা ও বাবা যথাক্রমে ‘ইমা’ এবং ‘ইপা’ নামে পরিচিত। এই ভাষায় শ্বশুর ও শাশুড়ি- এই সম্পর্ক দুটি যথক্রমে ‘ইকু/ইকুবক’ এবং ‘ইনেম/ইনেমবক’ নামে পরিচিত।

মেইতেই জনজাতির মধ্যে প্রধানত দুটি ধর্মের জনপ্রিয়তা রয়েছে- লৌকিক হিন্দুধর্ম এবং ‘সানামাহী’ ধর্ম, যা দেবী সানামাহীর উপাসনার মাধ্যমে পালন করা হয়। এই দুটি ধর্ম পৃথক হলেও মেইতেইদের মধ্যে দুটিকেই একসঙ্গে পালন করার রীতিও প্রচলিত রয়েছে। প্রত্যেক বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এই বিশেষ দেবীর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকে। এরা মূলত কৃষিকাজের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে। এদের প্রধান উৎপাদিত ফসল হলো ধান। এছাড়া জলাশয় থেকে মাছ শিকারও এদের অন্যতম প্রধান জীবিকা। মেইতেই জনজাতির সমাজ পিতৃতান্ত্রিক হলেও কৃষিকাজ, বাজারে জিনিসপত্র কেনাবেচা এবং সেলাই এর কাজে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও অংশ নেয়। মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম ছাড়াও মেইতেই জনজাতির একটি অংশ বর্তমান মায়ানমারে বসবাস করে, যেখানে এরা ‘কাথে’ নামে পরিচিত। এদের সঙ্গে মায়ানমারের হিন্দু জনসমাজের পরিবর্তে অন্যান্য বর্মীয় জনজাতির জীবনাচরণের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

গ্রন্থপঞ্জী:

Burling, R. 2003; The Tibeto-Burman Languages of Northeastern India. In G. Thurgood; R.J. Lapolla. (eds.). The Sino-Tibetan Languages; Routledge.

Census of India- 2011

Chelliah, S.L. 1997; Meitei Phonology; Mouton de Gruyter

Devi, S. 2013; Is Manipuri an Endangered Language? Language in India

Singh, S.I. 2013; Arguments in Manipuri; Language in India

Thoudam, P. 2006; Demographic and Ethnographic Information: Problems in the analysis of Manipuri Language; CIIL, Mysuru.