হমার জনজাতি মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের কুকিচীন-মিজো গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। হমার শব্দটি ‘হমরেহ’ শব্দ থেকে এসেছে। এদের আদি বাসস্থান ‘সিনলুং’ নামে একটি জায়গায়, যার প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে কোনো ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এরা নোম্যাডিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হওয়ার ফলে এদের গ্রামগুলি উন্নত নয় এবং এদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাও অনুন্নত। এই জনজাতির মহিলারা মূলত সেলাই এর কাজের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে থাকে। কৃষিকাজ এদের জীবনধারণের মূল উপায় হলেও চিরাচরিত প্রথায় কৃষিকাজের পরিবর্তে ঝুমচাষ এবং পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে চাষই এরা করে থাকে। তবে ঝুমচাষের পর জমির উর্বরতা হ্রাস পায় বলে এদের নিয়মিত স্থানত্যাগ করতে হয়। হমার জনজাতির বেশিরভাগ মানুষের নিজস্ব কোনো জমি নেই। হমার জনজাতির মধ্যে পশু শিকারের ঐতিহ্যও রয়েছে। তবে যখনই এরা কোনো পশু শিকার করে অথবা গবাদি পশু কেনে, তখন তার একটি অংশ প্রধানকে দিয়ে দিতে হয়। গ্রামের শাসনকাজে প্রধানকে সাহায্য করার জন্য বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি গ্রাম সংসদ থাকে যারা গ্রামীণ পারিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিবাদের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। হমার সমাজ পিতৃতান্ত্রিক, এখানে পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সম্পত্তির অধিকার লাভ করে। এদের সমাজে সম্পত্তির উপর মহিলাদের কোনো উত্তরাধিকার স্বীকার করা হয় না। দুঃস্থ ব্যাক্তি ও বিধবাদের সাহায্য করা হমার জনজাতির মধ্যে প্রধান কর্তব্য হিসেবে পরিগণিত হয়। এদের সমাজ ৭টি গোত্র অর্থাৎ ক্ল্যান-এ বিভক্ত, যাদের মধ্যে অনেকগুলি উপগোত্রও রয়েছে। এদের মধ্যে ইন্ট্রা-ক্ল্যান ম্যারেজ অর্থাৎ অন্তর্গোত্র বিবাহ স্বীকৃত নয়।
হমার জনজাতির মধ্যে নিজস্ব কিছু গান এবং নাচের ঐতিহ্য এখনও টিকে রয়েছে। এগুলি জনজাতিটির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ; কারণ বর্তমান মায়ানমারের শান প্রদেশ থেকে পরিযানের সময় এই জনজাতি এই গান এবং নাচের প্রথাগুলি বহন করে নিয়ে এসেছিলো। বাঁশের তৈরি গিটার, টিংটাং নামে এক বিশেষ প্রকার ভায়োলিন অর্থাৎ বেহালা এদের সঙ্গীতের প্রধান উপকরণ। এছাড়া নাচের সময় সঙ্গত করতে এবং তাল ঠিক রাখতে ‘খুয়োং’ নামে এক বিশেষ প্রকার ড্রাম ব্যবহার করা হয়।
প্রাচীন ও নিজস্ব অ্যানিমিজম নির্ভর ধর্মের পরিবর্তে সমগ্র মণিপুরের অন্যান্য জনজাতির মতো এরাও বর্তমানে খ্রিষ্টান ধর্ম অবলম্বন করে। হমার ভাষার কোনো লিখিত রূপ না থাকার কারণে এদের ইতিহাস মূলত স্মৃতিনির্ভর ও মৌখিক। লিখিত সাহিত্যের নিদর্শনও প্রায় নেই। বর্তমানে হমার জনজাতির নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষ খ্রিষ্টান মিশনারিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্কুলে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ পায়। ফলে বর্তমানে গাংতে জনজাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে এদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা ক্রমশ কমছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যলয়ের পাঠক্রমে ভাষাটির অন্তর্ভুক্তি এই ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলির সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করলেও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির ক্রমশ অবনমন ঘটছে। এদের পরিযায়ী প্রকৃতির জন্য এরা নতুন জায়গার সংস্কৃতি ও ভাষার সঙ্গে দ্রুত অভিযোজিত হতে সক্ষম; ফলে এদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি সেভাবে সংরক্ষিত হয় না। ইউনেস্কোর ভারতীয় বিপন্ন ভাষার তালিকায় হমার ভাষা ‘ভালনারেবল’ শ্রেনিতে স্থান পেয়েছে।
Census of India- 2011
Haokip, Pauthang. 2009. Noun Morphology in Kuki-Chin languages; Language in India
Hmar; www.ethnologue.com
Ramthienghlim, T. 2015; Language Loss and Maintenance within the Hmar Tribe; www.academia.edu
Singh, C.Y. 1995; The Linguistic Situation in Manipur. Linguistics of the Tibeto-Burman Area