খাড়িয়া ভাষা

খাড়িয়া ভাষা হলো অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর মুন্ডা শাখার দক্ষিণ উপশাখার একটি ভাষা; যা মূলত পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় এবং ওড়িশা রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় বসবাসকারী খাড়িয়া জনজাতির মানুষের মধ্যে প্রচলিত। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে খাড়িয়া জনজাতির মানুষের মোট সংখ্যা ২৯৭৬১৪ জন হলেও এদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। খাড়িয়া ভাষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নিকটতম ভাষা হলো জুয়াং। এই ভাষার নিজস্ব লিপির অস্তিত্ব নেই, এই ভাষায় লেখার কাজে মূলত দেবনাগরী, ওড়িয়া ও ল্যাটিন লিপি ব্যবহার করা হয়। খাড়িয়া জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে খাড়িয়া ভাষা ছাড়াও সাদরি, মুন্ডারি, কুরুখ, হিন্দি এবং ওড়িয়া ভাষার প্রচলন রয়েছে। ।

খাড়িয়া ভাষায় দুইটি প্রকারের অস্তিত্ব রয়েছে- দুধ খাড়িয়া ও ঢেলকি খাড়িয়া। আবার ঝাড়খণ্ড এবং অন্যান্য রাজ্যে প্রচলিত এই দুটি প্রকারের মধ্যেও ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণে বেশ কিছু বিভিন্নতা দেখা যায়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রায় ও রায় খাড়িয়া ভাষার তৃতীয় একটি প্রকারের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন, যেটি পাহাড়ি খাড়িয়া নামে পরিচিত। এই ভাষা ব্যবহারকারী অনেক মানুষ ‘খাড়িয়া’ শব্দের পরিবর্তে ‘খেড়িয়া’ শব্দটির ব্যবহার করেন; কারণ ‘খেড়িয়া’ শব্দটি ব্যাকরণগত দিক থেকে অধিকতর সঠিক।

‘খাড়িয়া’ শব্দটি ‘মানুষ’ শব্দের প্রোটো-মুন্ডা রূপ থেকে এসেছে। এই বিষয়টি নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট মতানৈক্যও বর্তমান। অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর উত্তর-মুন্ডা শাখার ভাষাগুলিতে (সাঁওতালি, মুন্ডারি প্রভৃতি) ‘মানুষ’ শব্দের প্রতিশব্দ ‘হর’ হলেও খাড়িয়া ভাষায় এই শব্দের কগনেট রূপটি হলো ‘কার’। এই পার্থক্য খাড়িয়া শব্দের উৎপত্তির একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করলেও ‘খাড়িয়া’ শব্দের মধ্যে নিহিত অ্যাসপিরেশনের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। অপর একটি মত হলো, ‘চক’ শব্দের ইন্দো-ইউরোপীয় প্রতিশব্দ ‘খড়ি’ থেকে ‘খাড়িয়া’ শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে। এই ভাষার স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি বৃহত্তর অস্ট্রো-এশিয়াটিক ধ্বনিগুলিকেই অনুসরণ করে। ব্রড প্রোনানশিয়েশন এবং শব্দের শুরুতে শ্বাসাঘাতের প্রাবল্য খাড়িয়া ভাষার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। খাড়িয়া ভাষায় বহুল প্রচলিত সিলেবল স্ট্রাকচার হলো CVC, এবং এই মাঝে অবস্থিত স্বরধ্বনিটির মধ্যে ন্যাসালাইজেশনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই CVC প্যাটার্ন কতকগুলি কনস্ট্রেন্ট এর মধ্যে অপারেট করে; যেমন- অপোজিশনগুলির নিউট্রালাইজেশন, কখনও অনসেট এ নন-ফোনেমিক গ্লটাল স্টপ এর উপস্থিতি ইত্যাদি। খাড়িয়া ভাষায় অনেকসময় ‘লো-হাই’ পিচ প্যাটার্ন পাওয়া যায়, যা এই ভাষাকে অন্যান্য অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা থেকে পৃথক করেছে। খাড়িয়া ভাষায় উপস্থিত গ্লটাল-স্টপটি ‘গ’ ধ্বনির আংশিক অ্যালোফোন হিসেবে বিবেচিত।

গ্রন্থপঞ্জী :

Anderson, G.D.S. 2008; The Munda Languages

Banerjee, G.C. Introduction to Kharia Language; Bengal Secretariat Press

Bagchi, T, (Rev.) Grammar of Kharia: A South Munda Language; John Peterson. Himalayan Linguistics, 2011

Census of India- 2011

Dash, B. 2020; Socio-Cultural Transformation of Kharia Tribes. International Journal of Research and Review