কুলুং জনগোষ্ঠী বৃহত্তর কিরাত জনজাতির অংশ। এদের মধ্যে এক্সোগ্যামাস ক্ল্যান বিবাহ প্রচলিত। এরা অত্যন্ত প্রান্তিক শ্রেণির জনজাতি, যারা রুক্ষ ও দুর্গম পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা; যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সুযোগসুবিধা নেই। এরা প্রথাগত কৃষিকাজে অভ্যস্ত, ভুট্টা ও মিলেট জাতীয় শস্যই এদের প্রধান উৎপাদিত ফসল। এছাড়া এরা মাছ ধরে এবং শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। পার্বত্য অঞ্চলের অনুর্বর জমিতে সারাবছর কৃষিকাজের সুযোগসুবিধার অভাব থাকায় এবং জলসেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এরা সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করতে পারে না।
কিরান্তিদের নিজস্ব ধর্মের পাশাপাশি কুলুং জনজাতির মধ্যে হিন্দূ ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন রয়েছে। এরা মানুষের মৃত্যুর পর মৃতদেহকে পোড়ানোর পরিবর্তে সমাহিত করে। কুলুং জনজাতির গ্রামগুলি আয়তনে বড়ো; একেকটি গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১০০০। এদের সমাজ অন্য কিরান্তি জনগোষ্ঠীর মতোই ১৬টি গোত্রে বিভক্ত। প্রত্যেকটি গোত্রের মালিকানায় বেশ কিছুটা অকৃষিযোগ্য জমি থাকে। ঘরবাড়িগুলি মূলত পাহাড়ের ঢালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থিত। এদের মধ্যে যৌথ পরিবারপ্রথা নেই; প্রতিটি পরিবারে ৪ জন থেকে সর্বাধিক ৭ জন সদস্য থাকেন। প্রত্যেকটি গ্রামে একাধিক গোত্রের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করতে পারেন। কুলুং সমাজ পিতৃতান্ত্রিক; বিবাহ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো একজন মহিলার উপর একজন পুরুষের সর্বময় কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। তবে বিবাহের আগে পাত্রকে অবশ্যই কন্যার বাড়ি থেকে অনুমতি নিতে হয়। সম্পত্তির উপর মেয়েদের কোনো উত্তরাধিকার থাকে না, উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবারের বড়ো ছেলে সমস্ত ভূসম্পত্তির অধিকার লাভ করে। কুলুং সমাজে বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন নেই; বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদও অনুমোদন করা হয় না। বিবাহের সময় কন্যার বাড়ি থেকে পাত্রকে বরপণ দেওয়ার প্রথা রয়েছে।
কুলুং জনজাতির নিজস্ব ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বর্তমান। হিমালয়ের উচ্চতর অংশে বসবাসের কারণে এরা স্বভাবগতভাবে প্রকৃতিপ্রেমিক। এদের নিজস্ব লোককথার ঐতিহ্য থাকলেও তা প্রধানত মৌখিক। কুলুং ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি না থাকার ফলে লিখিত সাহিত্যের বিকাশ সম্ভব হয়নি। এদের নিজস্ব লোককথা অনুসারে এদের প্রধান দেবতা হলেন ‘পারুওয়ান’ যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। নেপালি ভাষায় ‘পারুওয়ান’ শব্দের অর্থ হলো শিব অথবা কিরাতেশ্বর মহাদেব। প্রথমে সমগ্র পৃথিবী জলপূর্ণ থাকলেও পরে বাঁশ, বাদাম ইত্যাদি উদ্ভিদ এবং পরে পাখি ও মানুষ সৃষ্টি করেন। তাঁর সৃষ্টি করা প্রথম মানুষ হলেন নিনামরিদুং। এই জনজাতির পুরোহিত অর্থাৎ শ্রমণরা মন্ত্র উচ্চারণ করার সময় এই প্রথম সৃষ্ট মানুষের নাম উচ্চারণ করেন। এই ঘটনার মাধ্যমে বৃহত্তর কিরাত জনজাতির মধ্যে লৌকিক হিন্দু ধর্মের দুটি মূল ধারার একটির প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।
বর্তমানে কুলুং জনজাতির মধ্যে হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে প্রাচীন ও নিজস্ব প্রথা ও রীতিনীতিগুলির মধ্যে বিমিশ্রণ ও অবনমন ঘটছে। সরকারি ভাষা নেপালিরর শব্দভাণ্ডার থেকে অনেক শব্দ কুলুং ভাষার মধ্যে প্রবেশ করার ফলে ভাষিক বৈশিষ্ট্য ও শব্দভাণ্ডারের ক্রমশ সংকোচন ঘটছে।
Kulung: A language of Nepal; Ethnologue.
Mcdougal, C. STRUCTURE AND DIVISION IN KULUNG RAI SOCIETY; Kailash: Kathmandu.
Sudin, K.C. 2020; The Creation of Eastern Nepal’s Kulung Rai; INSIDE HIMALAYAS
The Kulung: Language and Traditions; International Institute for Asian Studies.
Tolsma, G.J. 2006; A Grammar of Kulung. Languages of the Greater Himalayan Region: Boston.
Census of India-2011