গোন্ডি ভাষা দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীর দক্ষিণ-মধ্য শাখার ভাষাসমুহের মধ্যে অন্যতম একটি ভাষা, যা ভারতের মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশগড় রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে এই জনজাতির বসবাস রয়েছে; তবে কোথাও এদের ঘনসন্নিবিষ্ট বসতি গড়ে ওঠেনি। এই ভাষা গোন্ড জনজাতির নিজস্ব ভাষা। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জনজাতির জনসংখ্যা প্রায় ২ মিলিয়নের বেশি হলেও এদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ এই ভাষার ব্যবহারে দক্ষ। গোন্ডি ভাষায় গুঞ্জালা-গোন্ডি লিপি এবং দেবনাগরী লিপি লেখার কাজে ব্যবহার করা হয়।

গোন্ডি ভাষার ব্যঞ্জনধ্বনিগুলির মধ্যে ন্যাসাল, স্টপ (ভয়েসড, ভয়েসলেস ও ব্রিদি), ফ্রিকেটিভ, অ্যাপ্রক্সিমেন্ট ও ট্যাপ (অ্যালভিওলার ও রেট্রোফ্লেক্স) এর অস্তিত্ব আছে। মোট ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ৩৪টি। এছাড়া ৫টি স্বরধ্বনি রয়েছে, যেগুলি হাই, মিড ও লো- এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। গোন্ডি ভাষার প্রকার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রামাণ্য গবেষণা এখনও হয়নি। কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রকারের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে, যেমন- দোরলা, কোয়া, মাদিয়া, মুরিয়া, রাজ-গোন্ড ইত্যাদি। এই সমস্ত প্রকারগুলি বেশিরভাগই মিউচুয়ালি আনইন্টেলিজিবল অর্থাৎ পারস্পরিক বোধগম্যতার সূত্রে আবদ্ধ নয়। এই ভাষার উত্তর-পশিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রকারের মধ্যে ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কতকগুলি পার্থক্য নির্দেশ করা যায়। সেরকম একটি বৈশিষ্ট্য হলো শব্দের আদিতে ‘স’ ধ্বনির ব্যবহার; যা উত্তর-পশ্চিমের প্রকারগুলিতে বজায় থাকলেও দক্ষিণ-পূর্ব প্রকারগুলিতে উক্ত ‘স’ ‘হ’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মুন্সী মঙ্গল মাসারাম ব্রাহ্মী লিপির উপর নির্ভর করে গোন্ডি ভাষার নিজস্ব লিপি উদ্ভাবন করেন। এই লিপি অন্যান্য ভারতীয় লিপির মতোই ‘আলফাসিলেবারি’। এই লিপি ইউনিকোডে এনকোড করা থাকলেও গোন্ড জনজাতির মানুষের স্বল্প শিক্ষার হারের কারণে এই লিপিটির অত্যধিক ব্যবহার হয় না। যদিও গুঞ্জারা গোন্ডি লিপিতে লেখা প্রায় ১২টি পাণ্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া গেছে।

গ্রন্থপঞ্জী :