উত্তর ২৪ পরগণা জেলা
১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে অশোক মিত্র কমিশনের সুপারিশ অনুসারে পূর্বতন অবিভক্ত ২৪ পরগণা জেলাকে ভেঙে পৃথক উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা গঠন করা হয়। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বে নদীয়া জেলা এবং বাংলাদেশের খুলনা, দক্ষিণে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা, পশিমে হাওড়া ও হুগলি জেলা অবস্থিত। এই জেলার মোট আয়তন ৪০৯৪ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণ্না অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১০০০৯৭৮১ জন। উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় কলকাতার ইনফর্মেশন টেকনোলজি হাব গড়ে উঠেছে।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা, কলকাতা নিকটবর্তী হওয়ার ফলে বাংলা ভাষার মান্য চলিত রূপটিই কথা বলা ও লেখার কাজে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁ, গাইঘাটা, ঠাকুরনগর ইত্যাদি এলাকায় স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ থেকে মানুষের আগমন ও বসতিস্থাপনের ফলে ‘বঙ্গালি’ প্রকারটিও এই জেলায় প্রচলিত। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্ভুক্ত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে জীবিকার সন্ধানে রাজ্যের বাইরের বহু মানুষ বসতি গড়ে তোলার ফলে হিন্দিভাষারও প্রচলন রয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ধুলুনি অঞ্চলের সর্দারপাড়া গ্রামে ওঁরাও জনজাতির বসবাস রয়েছে। এরা মূলত পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ থেকে আগত। এরা প্রায় ১০০ বছর আগে জমিদারের বসানো নীলকর এড়াতে বাংলাদেশ থেকে এই অঞ্চলে চলে আসে। এরা মূলত ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের একটি দ্রাবিড় জনগোষ্ঠি যারা আর্যদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে প্রথমে বাংলাদেশ এবং পরবর্তী সময়ে উত্তর ২৪ পরগণায় বসতি স্থাপন করে এদের মধ্যে টীরকে, টোপ্পো, কেরকেট্টা, মিজ, খালখো, লাকড়া ইত্যাদি গোত্র দেখা যায়। এদের ভাষা হল কুরুখ, যা দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠির উত্তর দ্রাবিড় শাখার অন্তর্গত এবং মালতো ও ব্রাহুই ভাষার সঙ্গে নিকট সম্পর্কে আবদ্ধ। এই ভাষায় ‘তোলং সিকি’ নামে নিজস্ব লিপির প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে ভাষাটি পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এছাড়া এই জেলার আমডাঙা ব্লকে সাঁওতাল ও মুণ্ডা জনজাতির মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে যাদের ভাষা সাঁওতালি ও মুণ্ডারি। এই দুটি ভাষাই অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির উত্তর-মুণ্ডা শাখার অন্তর্গত। সাঁওতালি একটই প্রধান আঞ্চলিক ভাষা যাতে লেখাপড়ার সুযোগ এবং লিখিত সাহিত্যের অস্তিত্ব রয়েছে। মুণ্ডারি ভাষা পশ্চিমপ্রান্তের জেলাগুলিতে বহুল প্রচলিত হলেও উত্তর ২৪ পরগণায় এর কোনো ঘনসংঘবদ্ধ এলাকা নেই।
ঝুমুর নাচ (প্রধানত পুরুষদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যপূর্ণ পোষাকে, ঢাক, বাঁশি এবং তাল সহযোগে নাচ), তরজা গান (কবিগানের লড়াই- যার কাহিনিগুলি রামায়ণ ও মহাভারত থেকে গৃহীত) ইত্যাদি উত্তর ২৪ পরগণার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে।
