পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

চামলিং সংস্কৃতি

পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী হওয়ার ফলে এরা প্রচলিত কৃষিকাজে অভ্যস্ত নয়। পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে চাষ ও ঝুম চাষ এদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। জলসেচ ব্যবস্থা খুব উন্নত নয়, প্রধানত বৃষ্টির ও নদীর বরফগলা জলের উপর নির্ভর করে কৃষিকাজ হয়। বেশিরভাগ মানুষের নিজস্ব জমি নেই, ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বেশি, যারা অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ধান, ভুট্টা এদের প্রধান উৎপাদিত ফসল। প্রধান অর্থকরী ফসল হলো সুপারি। এরা শুকর পালনের মাধ্যমেও জীবিকা নির্বাহ করে। বাড়ি মূলত কাঠের তৈরি ও দোতলা- উপরের তলা বসবাস এবং নীচের তলা ফসল রাখা ও গবাদি পশুর আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এরা মূলত ‘সামানিজম’ অনুশীলন করে, প্রকৃতিমাতা, পূর্বপুরুষ, সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, অগ্নি এবং বাড়ির মূল থামকে উপাসনা করে। ‘নাকচোং’ নামক পুরোহিতের দ্বারা এই অনুষ্ঠানগুলি সম্পন্ন করা হয়। এদের প্রধান দেবী হলেন ‘সামনিমা’ নামে এক দেবী, যাকে এরা প্রকৃতি হিসেবে পূজা করে। ‘পারুহাং’ নামে এক পুরুষ দেবতাকে আকাশের দেবতা হিসেবে উপাসনা করা হয়। রাই জনজাতির অন্যান্য শাখার মতো এরাও বিভিন্ন উৎসব পালন করে যথা, ‘উধাওলি’, ‘উভাওলি’ এবং ‘ইয়েলে সাম্বাত’ অর্থাৎ মাঘ সংক্রান্তি। এদের প্রধান উৎসব হলো ‘সাকেলা’, যেখানে এই জনজাতি প্রকৃতি ও পূর্বপুরুষের উপাসন করে থাকে যিনি ‘চুলা’ অর্থাৎ উনুন এর ভিতর বসবাস করেন বলে মনে করা হয়। এই উৎসবই বছরে দুবার পালন করা হয়, যা যথাক্রমে ‘উধাওলি’ ও ‘উভাওলি’ নামে পরিচিত। ‘সাকেলা উভাওলি’ বৈশাখী পূর্ণিমাতে পালন করা হয়, এবং মাঘ মাসের পূর্ণিমাতে ‘সাকেলা উধাওলি’ পালন করা হয়। ‘উভাওলি’ তে এরা পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও চাষের সময় অনুকুল আবহাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে। ভালো ফসল হলে প্রকৃতি মা কে ধন্যবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘উধাওলি’ পালিত হয়। সাকেলা উৎসবে এক বিশেষ প্রকার নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। এই নাচের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মগুলিই প্রতিফলিত হয়। সাকেলা উৎসব পালন ‘চন্ডী নাচ মুরাত’ নামেও পরিচিত। এতে তারা দেবী দুর্গার উপাসনা করে, যিনি চামলিং জনজাতির কাছে ‘চণ্ডী’ নামে পরিচিত। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের কিরাত জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্গা পূজার প্রচলন সম্বন্ধে ‘হরিভাষ্য’ পুরাণে উল্লেখ করা আছে।

কিরাতরা সাধারণভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নেপালের চামলিংরা হিন্দু ধর্ম অনুশীলন করলেও পশ্চিমবঙ্গের ও সিকিমের চামলিংরা বর্তমানে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুগামী। ফলে এদের নিজস্ব প্রাচীন ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাষা বৈশিষ্ট্যগুলি ক্রমশ বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলশ্রুতি হিসেবে ইউনেস্কোর বিপন্ন ভাষার তালিকায় এটি ‘ডেফিনিটলি এন্ডেঞ্জারড’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রচলিত লিম্বু ভাষা সিকিমে সরকারি ভাষার মর্যাদা পেলেও চামলিং ভাষার কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। স্কুল কলেজের পাঠক্রমেও এই ভাষাটির অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। নিজস্ব লিপির বিকাশ না ঘটায় এই ভাষার লেখ্যরূপের ও লিখিত সাহিত্যের বিকাশও সম্ভব হয়নি। উল্লিখিত কারঙুলি চামলিং ভাষার ক্রমানবনমনের জন্য দায়ী।

গ্রন্থপঞ্জী:

Census of India, 2011

Census of Nepal 2011

Chemjong, I.S. “History and Culture of the Kirat”.

European Bulletin of Himalayan Research, Issue 17-19, Sudesien Institut, 1999

Cemjonga, Imana Simha, History and Culture of the Kirat People. Kirat Yakthung Chumlung

Subba, T.B. Politics of Culture: A Study of three Kirata Communities in the Eastern Himalayas.