কুলুং ভাষা সিনো-তিব্বতিয় ভাষাগোষ্ঠীর কিরান্তি শাখার সেন্ট্রাল উপশাখার একটি ভাষা যা মূলত নেপালের হোঙ্গু নদীর তীরবর্তী ছেমসি ও ছেকসাম জেলায় বলা হয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ভারতের সিকিম রাজ্যের উত্তর-পূর্বাংশ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কালিম্পং জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে এই ভাষার মানুষজন বসবাস করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষায় প্রায় ৩৩০০০ মানুষ কথা বলেন। পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম মানুষের মাতৃভাষা হলো কুলুং। এটি মূলত নেপালের কিরাত-কুলুং জনজাতির মাতৃভাষা, যাদের কিছু অংশ আধুনিক কালে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ সৈন্যবাহিনীর অংশ হিসেবে পরিযানের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করেছিল।

রাই গোষ্ঠীর ৩৪টি ভাষার মধ্যে একটি হলো কুলুং ভাষা। এই ভাষায় ৬টি হ্রস্ব ও ৬টি দীর্ঘ স্বরধ্বনি রয়েছে, যাদের মধ্যে অগ্র ও মধ্য (ফ্রন্ট ও সেন্ট্রাল) স্বরধ্বনিগুলি আনরাউন্ডেড এবং পশ্চাৎ অর্থাৎ ব্যাক স্বরধ্বনিগুলি রাউন্ডেড। এছাড়া কুলুং ভাষায় ২২টি ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে যাদের মধ্যে ন্যাসাল, প্লোসিভ ও তিনটি এফ্রিকেট (ভয়েসড ও ভয়েসলেস), একটি ফ্রিকেটিভ, ফ্ল্যাপ ও এপ্রক্সিমেন্ট স্বরধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়া এই ভাষায় ১১টি ডিপথং এর অস্তিত্ব রয়েছে। স্টপ বা প্লোসিভের তিনটি প্রকারের অস্তিত্ব এই ভাষায় দেখা যায়, যথা- ডরসো-ভেলার, ডেন্টাল এবং লেবিয়াল। বিশেষ্য শ্রেণিভুক্ত পদসমূহের মধ্যে বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও নিউমেরাল অর্থাৎ সংখ্যাবাচক পদ রয়েছে। বিশেষ্য কেস অর্থাৎ কারক এবং বচনের জন্য মার্কিং লাভ করে; অন্যদিকে ভার্ব অর্থাৎ ক্রিয়া পুরুষ, বচন ও ক্রিয়ার কালের উপর ভিত্তি করে মার্কিং লাভ করে। এই ভাষাতে তিনটি বচনের অস্তিত্ব রয়েছে- একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন। এছাড়া উত্তম, মধ্যম ও প্রথম এই তিন প্রকার পুরুষের অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়া একটি সুস্পষ্ট ইনক্লুসিভ ও এক্সক্লুসিভ এর প্রকারভেদ এই ভাষায় বর্তমান।এই ভাষায় কোনো লিঙ্গগত বিভাগের অস্তিত্ব নেই। কুলুং ভাষায় ১৩টি কেস অর্থাৎ কারকের অস্তিত্ব রয়েছে, এই কারকের মার্কারগুলি নন-সিঙ্গুলার অ্যাফিক্স হিসেবে বিশেষ্যর সঙ্গে যুক্ত হয়। মূল কারকের বিভাগগুলি ছাড়াও এই ভাষায় ৪ প্রকার লোকেটিভ এবং ‘ইলেটিভ’ ও ‘মিডিয়েটিভ’ নামে দুই প্রকার কারক অর্থাৎ কেস দেখা যায়।

কুলুং ভাষার ভার্ব অর্থাৎ ক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো কমপ্লেক্স প্রোনোমিনালাইজেশন, যেখানে প্যারাডিগম্যাটিক স্টেম অল্টারেশন দেখা যায়। ভার্ব প্যারাডাইমের মধ্যে স্টেমের সংখ্যা ও অবস্থান অনুসারে প্রত্যেকটি ক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট কনজুগেশন টাইপের অন্তর্ভুক্ত হয়। কুলুং ভাষায় অন্যান্য কিরান্তি ভাষার মতো কম্পাউণ্ড ভার্ব অর্থাৎ যৌগিক ক্রিয়ার অস্তিত্ব রয়েছে। এই যৌগিক ক্রিয়াসমূহের মধ্যে একটি ভার্ব-স্টেম অর্থাৎ ক্রিয়ার রূপমূল এবং একটি অক্সিলিয়ারি অর্থাৎ সাহায্যকারী ক্রিয়া থাকে যেটি ক্রিয়ার মধ্যে সেমান্টিক অর্থাৎ অর্থতাত্ত্বিক অনুষঙ্গ যোগ করে। এছাড়া অন্যান্য ক্রিয়াসূচক গঠনের মধ্যে জিরান্ড, ইম্পারেটিভ ও ইনফিনিটিভ উল্লেখযোগ্য।

গ্রন্থপঞ্জী :