খোইবু প্রধানত মণিপুর রাজ্যে বসবাসকারী একটি জনজাতি, যাদের ভাষাও খোইবু নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি , উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এই জনজাতি বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। খোইবু ভাষা মণিপুরের চান্দেল জেলার খোইবু, নারুম, সাইবোল এবং ইয়াংখুল নামক স্থানগুলিতে বলা হয়। এটি সিনো-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের কুকচীন-নাগা শাখার অন্তর্গত। তাংখুল ভাষাগুলি (প্রধানত মারিং) এর সাথে খোইবু ভাষা নিকট সম্পর্কে আবদ্ধ। এই জনজাতির মানুষ নিজেদের ‘উইপো’ নামে অভিহিত করে। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ফ্রেডরিখ ম্যাক্স মুলারের ‘দি ক্লাসিফিকেশন অফ তুরানিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ’ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্রিয়ারসনের ‘লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইণ্ডিয়া-ভলিউম ৩, ভাগ ২’ এ খোইবু জনজাতির উল্লেখ রয়েছে। এদের আদি বাসস্থান মণিপুরেই এদের মোট সংখ্যা মাত্র ২৮০০। ফলে এই জনজাতি ও ভাষাটির অস্তিত্ব বিপন্ন।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দে জি পি আর এন খোইবু জনজাতিকে একটি পৃথক নাগা জনজাতি হিসেবে চিহ্নিত করে। এদের প্রাচীন বাসস্থান হলো মায়ানমারের নিকটবর্তী পূর্ব মণিপুর পাহাড়ের খোইবু খুললেন নামক গ্রাম। ‘খোইবু’ শব্দের উৎপত্তি ‘খোই’ অর্থাৎ মৌমাছি, এবং ‘পু’ (আকাপু থেকে) যার অর্থ মালিক। খোইবু জনজাতি তাদের আদি বাসভূমি এলাকায় মূলত মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতো। পরবর্তীকালে এরা অসমের হাফলং জেলা, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর, এবং পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলে পরিযান ঘটায়।

খোইবু ভাষা একটি টোনাল অর্থাৎ ধ্বনিপ্রধান ভাষা, যাতে স্বর ও ব্যাঞ্জন উভয় ধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে। খোইবু ভাষায় হাই, মিড ও লো মিলিয়ে ৬টি স্বরধ্বনি রয়েছে যারা শব্দের প্রথমে, মধ্যভাগে বা শেষে থাকতে পারে। এছারা এই ভাষায় ৬টি ডিপথং এর অস্তিত্ব রয়েছে। খোইবু তে ২১টি ব্যাঞ্জনধ্বনির অস্তিত্ব রয়েছে। এদের মধ্যে ১২টি স্টপ, ২টি ফ্রিকেটিভ, ৩টি ন্যাসাল, ১টি ল্যাটারাল, ১টি ট্রিল ও ২টি অর্ধ স্বরধ্বনি। এছাড়া এই ভাষায় ৩ প্রকার টোন- লেভেল, ফলিং ও রাইজিং এর অস্তিত্ব রয়েছে। লেভেল টোনটি মার্কড নয়, বাকি দুটি টোন মার্কড। এই টোনগুলি মূলত মোনোসিলেবিক ও ডাইসিলেবিক অক্ষরের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই ভাষায় কোন জাঙ্কচারের অস্তিত্ব নেই।

গ্রন্থপঞ্জী :