রংমেই ভাষা
রংমেই ভাষা হলো সিনো-তিব্বতীয় ভাষাবংশের জেমেইক শাখার একটি ভাষা, যা মূলত মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার কিছু অংশে প্রচলিত। প্রধানত রংমেই-নাগা জনজাতির মানুষ এই ভাষাটি ব্যবহার করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ৩৫০১৮০।
এটি একটি তিব্বত-বর্মীয় ভাষা। এই ভাষার একটি অন্যতম প্রধান ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হলো ফোনেমিক ডিস্টিংশন বোঝাতে টোনের ব্যবহার। এটি বেশিরভাগ তিব্বত-বর্মীয় ভাষার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। রংমেই ভাষার ফোনেমিক ইনভেন্টরিতে মোট ৬টি স্বরধ্বনি এবং ১৯টি ব্যঞ্জনধ্বনি রয়েছে। মোট তিনটি টোনের উপর নির্ভর করে রংমেই ভাষার ফোনেমিক ইনভেন্টরিটি গড়ে উঠেছে- মিড-লেভেল, হাই-রাইজিং এবং লো-ফলিং। এই ভাষার স্টপ ও ফ্রিকেটিভ ব্যঞ্জনধ্বনির ক্ষেত্রে অ্যাসপিরেটেড এবং আনঅ্যাসপিরেটেড এবং ভয়েসড ও আনভয়েসড- এই দুটি শ্রেণি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ন্যাসাল, অ্যাফ্রিকেট, ট্রিল, ল্যাটারাল এবং সেমি-ভাওয়েলের অস্তিত্ব রয়েছে। প্লেস অফ আর্টিকুলেশন অর্থাৎ উচ্চারণের স্থান অনুসারে এদের ৬টি ভাগে ভাগ করা যায়- বাইলেবিয়াল, ডেন্টাল, অ্যালভিওলার,প্যালেটাল, ভেলার ও গ্লটাল। /p/ ও /ph/- এই দুটি হলো যথাক্রমে ভয়েসলেস-বাইলেবিয়াল-স্টপ এবং ভয়েসলেস-বাইলেবিয়াল-অ্যাসপিরেটেড স্টপ; যেগুলি শব্দের প্রথমে, মাঝে এবং শেষে- এই তিনটি জায়গাতেই বসতে পারে। /t/ হলো ভয়েসলেস-ডেন্টাল-আনঅ্যাসপিরেটেড স্টপ, যেটি শব্দের প্রথমে, মাঝে এবং শেষে- এই তিনটি স্থানেই বসতে পারে। এই ভাষায় গ্লটাল-স্টপ কেবলমাত্র শব্দের শেষে বসতে পারে। /i/ স্বরধ্বনিটি হলো হাই-ফ্রন্ট- আনরাউন্ডেড ভাওয়েল যা শব্দের প্রথমে, মাঝে ও শেষে বসতে পারে। /e/ হলো ফ্রন্ট-মিড-আনরাউন্ডেড ভাওয়েল যেটি শব্দের প্রথমে, মাঝে এবং শেষে- এই তিনটি জায়গাতেই বসতে পারে। /a/ হলো লো-ব্যাক-আনরাউন্ডেড ভাওয়েল, যা কেবলমাত্র শব্দের প্রথমে এবং মাঝে বসতে পারে। এই ভাষায় মোট ৪ প্রকার জেন্ডার অর্থাৎ লিঙ্গ ব্যবহৃত হয়-পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, উভলিঙ্গ এবং অপ্রাণীবাচক। রংমেই ভাষার জেন্ডার-মার্কিং সম্পূর্ণভাবে লেক্সিকাল এবং সাফিক্সিং- অর্থাৎ জেন্ডার-মার্কারটি শব্দের শেষে বসে। একটি বিশেষ্যের অর্থের উপর নির্ভর করে তার জেন্ডার নির্ধারিত হয়। দুটি পৃথক লিঙ্গের মধ্যে মূলগত সেমান্টিক ডিস্টিংশন মূলত অ্যানিমেট এবং ইনঅ্যানিমেট- এই দু'টি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। রংমেই ভাষার বেশিরভাগ শব্দ মোনোসিলেবিক হলেও এই ভাষার ১টি শব্দে সর্বোচ্চ ৬টি সিলেবল থাকতে পারে। কিন্তু ৬টি সিলেবলযুক্ত শব্দের সংখ্যা এই ভাষায় খুব কম। ভাষাগত বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য এবং ভৌগোলিক অবস্থানগত নৈকট্যের কারণে লিয়াংমেই এবং জেমি-নাগা এই দুটি ভাষাকে রংমেই ভাষার ‘সিস্টার ল্যাঙ্গুয়েজ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। রংমেই ভাষার সিলেবল এর গঠনের সঙ্গে এই দুটি ভাষার অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। রংমেই ভাষার বেশিরভাগ মনোসিলেবিক শব্দ CV প্যাটার্ন অনুসরণ করে। এছাড়া অল্প কিছু মোনোসিলেবিক শব্দ রয়েছে যারা VC প্যাটার্ন অনুসরণ করে। এছাড়া রংমেই ভাষায় ডিপথং এবং কনসোনেন্ট-ক্লাস্টারেরও অস্তিত্ব রয়েছে। প্রত্যেক সিলেবলের মধ্যেই একটি করে নির্দিষ্ট টোন থাকে। এই ভাষায় একটি একক স্বরধ্বনিও একটি সিলেবল, মরফিম অথবা একটি পৃথক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই ভাষায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সিলেবল-প্যাটার্নটি হলো CVC। সিলেবল-পিক এর ফরগোয়িং এবং তার পরবর্তী প্রতিবেশ(এনভায়রনমেন্ট) এর উপর নির্ভর করে রংমেই ভাষায় সিলেবলকে স্প্লিট করা অর্থাৎ ভেঙে ফেলা যায়। রংমেই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপির অস্তিত্ব নেই, এই ভাষার পুনর্গঠনের কাজে ভাষাতাত্ত্বিকরা রোমান লিপির ব্যবহার করে থাকেন। এই প্রবণতার ফলে অনেক অসমিয়া শব্দ রংমেই ভাষার নিজস্ব শব্দভাণ্ডারে স্থান পেয়েছে। এছাড়া টোনের প্রাধান্য এই ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়ার ফলে এই ভাষার নিজস্ব লিপি গঠন করার ক্ষেত্রে টোনকে স্থান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ফলে অসমিয়া এবং রোমান- এই দুটি লিপি বর্তমানে লেখার কাজে বহুল ব্যবহৃত হলেও এই ভাষার নিজস্ব জটিলতার কারণে এর নিজস্ব লিপি তৈরি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গ্রন্থপঞ্জী :
Beeju, K. 2014. A Way of the Zeliangrong Nagas with Special Reference to Rongmei (Kabui) Tribe; International Journal of Social Science & Humanities
Census of India- 2011
Deb, D. 2019. A Study on Rongmei Syllable Structure; Journal of Literature, Language and Linguistics
Deb, D. 2019. Relative Clause in Rongmei Naga; International Journal of Linguistics