পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

কোচ সংস্কৃতি

কোচ ভাষা ব্যবহারকারী মানুষজন মূলত দ্বিভাষিক হলেও বাড়ির পরিবেশে নিজেদের মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে কোচ জনজাতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের মাতৃভাষার ব্যবহারে অভ্যস্ত। মেঘালয় রাজ্যে বসবাসকারী কোচ জনজাতির অপেক্ষাকৃত পূর্ববর্তী প্রজন্মের মানুষদের মধ্যে কেবলমাত্র কোচ ভাষা ব্যবহারের প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। এদের সমাজ বেশ কয়েকটি গোত্র ও উপগোত্রে বিভক্ত। পূর্বে একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক অনুমোদন করা না হলেও বর্তমানে বাঙালি, অসমিয়া, গারো, বোড়ো ইত্যাদি জাতির সঙ্গেও কোচ জনজাতির বিবাহ সম্পর্ক স্থাপিত হচ্ছে। ফলে অন্যান্য জাতির ভাষা, বাকরীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্রমশ কোচ জনজাতির জীবনাচরণকে প্রভাবিত করছে। মেঘালয় রাজ্যের কোচ জনজাতির শিশুরা মাতৃভাষা হিসেবে কোচ ভাষা শেখার সুযোগ পেলেও, যখনই কোনো কোচ পুরুষের সঙ্গে বাঙালি বা অসমিয়া মহিলার বিবাহ হয়, তখন তাদের সন্তান মায়ের প্রভাবে বাংলা বা অসমিয়া ভাষাকেই মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। বাংলা এবং অসমিয়া সংবিধানের অষ্টম তফশিলের অন্তর্ভুক্ত স্বীকৃত সরকারি ভাষা হওয়ায় এই ভাষাগুলিতে শিক্ষা এবং কাজের সুযোগ কোচ ভাষার তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া কোচ ভাষার নিজস্ব লিপি না থাকার কারণে এর সাহিত্যিক নিদর্শনগুলি মূলত মৌখিক। ফলে অনেকসময় এগুলির বিকৃতি ঘটে। কোচ ভাষা বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এই জনজাতির শিশুরা অনেকাংশে বাংলা বা অসমিয়া ভাষায় লেখাপড়া শিখতে বাধ্য হয়। এই বিষয়টি অনস্বীকার্য যে, কোচ এবং বাংলা ও অসমিয়া- এই ভাষাগুলির মধ্যে একটি মূলগত পার্থক্য রয়েছে। কোচ একটি সিনো-তিব্বতীয় ভাষা এবং বাংলা এবং অসমিয়া দুটিই ভারতীয়-আর্য ভাষা। কিন্তু এই ভাষাগুলির মধ্যে ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের নিরিখে বহু গুণগত এবং মাত্রাগত পার্থক্য থাকলেও ব্রিটিশ আমল থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে ব্যাপক মাত্রায় বাঙালিদের আগমন এবং চা-শ্রমিক হিসেবে কোচ জনজাতির মানুষের অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে পরিযান- এই দুটি বিষয়ই কোচ ভাষার উপর বাংলা ও অসমিয়া ভাষার প্রভাবের মূল কারণ। এছাড়া গারো, বোড়ো, রাভা ইত্যাদি অন্যান্য জনজাতির ভাষাগুলিও কোচ ভাষা এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত ভারতের বিপন্ন ভাষার তালিকায় কোচ ভাষা ‘ডেফিনিটলি এন্ডেঞ্জারড’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।

গ্রন্থপঞ্জী:

Census of India- 2011

Dattamajumdar, S. 2020. ETHNOLINGUISTIC VITALITY OF KOCH; Buckingham Journal of Languages and Linguistics

Koch; www.ethnologue.com

Kondakov, A. 2015. Harigaya Koch Phonology; North East Indian Linguistics 7. Asia-Pacific Linguistics

Kondakov, A. 2012. Koch Dialects of Meghalaya and Assam: A sociolinguistic survey. www.reseachgate.net