মূলত বাঁশের ঝুড়ি তৈরি তুরি জনজাতির মানুষের প্রধান জীবিকা। জীবিকার দিক থেকে তুরি জনজাতির সঙ্গে মাহালি জনজাতির সাদৃশ্য রয়েছে। কৃষিকাজ এদের অপর প্রধান জীবিকা হলেও তুরি সমাজের বেশিরভাগ মানুষের নিজস্ব কোনো জমি নেই; মূলত অপরের জমিতে ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করে এই জনজাতি জীবিকা নির্বাহ করে। এই সমস্ত কারণে এদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই তুরি জনজাতি তফশিলি জাতি হিসেবে স্বীকৃত। তবে এদের মধ্যে শিক্ষার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত; তুরি জনজাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের অক্ষর পরিচয় নেই।

তুরি জনজাতির প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ বর্তমানে হিন্দুধর্ম অনুসরণ করে। বৃহত্তর মুণ্ডা জনজাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তুরিদের মধ্যে অ্যানিমিজম এবং টোটেম উপাসনার প্রথা বর্তমানে প্রায় নেই। তুরি জনজাতি প্রধানত স্বজাতির মধ্যে বিবাহ অনুমোদন করলেও একই গোত্রের পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক অর্থাৎ আন্তর্গোত্র বিবাহ অনুমোদন করে না। পূর্বে তুরি জনসমাজে শিশুবিবাহের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে এই প্রথাটি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তুরি সমাজ পিতৃতান্ত্রিক, এখানে পিতার মৃত্যুর পর পুত্রই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। মানুষের মৃত্যুর পর তুরি সমাজের প্রাচীন প্রথা অনুসারে মৃতদেহকে সমাধি দেওয়া হয়।

তুরি জনজাতির মানুষ প্রধানত দ্বিভাষিক অথবা ত্রিভাষিক। এদের নিজস্ব ভাষাটিতে শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ না পেয়ে এই জনজাতি সাঁওতালি, মুন্ডারি ইত্যাদি প্রধান আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে শিক্ষালাভের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। শিক্ষালাভের সুযোগ কম থাকায় এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে এই জনজাতির মধ্যে নিজস্ব ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা কম। সাঁওতালি এবং অন্যান্য সরকারি ভাষায় জীবিকা ও সুযোগসুবিধা বেশি থাকায় এই জনজাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষাটির ব্যবহারে আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে। শিশুদের বাবা-মাও তাদের এই ভাষাটি শেখাতে আগ্রহী নন। ফলে তুরি ভাষার পূর্ব প্রজন্ম থেকে উত্তর প্রজন্মে সঞ্চারণের বিষয়টি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাবে এদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় রীতিনীতিগুলির ব্যবহারও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ইউনেস্কোর ভারতীয় বিপন্ন ভাষার তালিকায় তুরি ভাষা ‘ক্রিটিকালি এন্ডেঞ্জারড’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।

গ্রন্থপঞ্জী: