ভুটানে বসবাসকারী দাকপা জনজাতির সমগ্র অংশই বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে। তবে অরুণাচল প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী দাকপা জনজাতির বেশ কিছু অংশ এখনও প্রাচীন ধর্ম এবং বন ধর্ম অনুসরণ করে। দাকপা জনজাতির মানুষদের অধিকাংশ তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের ‘রেড-হ্যাট’ শাখার অনুসারী। এছাড়া এদের প্রাচীন ধর্ম বলতে তিব্বতী সামানিজমকে বোঝায়।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভুটানের মাত্র তিন শতাংশ জমি কৃষিযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চল এবং অরুণাচল প্রদেশেও কৃষির উপযোগী মৃত্তিকা, জলবায়ু, জলসেচ ব্যবস্থা ইত্যাদির অভাব রয়েছে। এই সমস্ত কারণে পশুপালনের মাধ্যমেও দাকপা জনজাতির মানুষ জীবিকা অর্জন করে থাকে। এদের কৃষিজমির বেশিরভাগ অংশই পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে এবং বাড়ির ছাদে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়। এদের প্রধান উৎপাদিত ফসল ভুট্টা ও মিলেট জাতীয় শস্য। দাকপা সমাজে কোনোরকম জাতিভেদ প্রথার অস্তিত্ব না থাকলেও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর মানুষের সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। এদের নাম দুটি অংশে বিভক্ত হলেও প্রকৃত নাম ও পদবি- এই বিভাগটি এদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। স্বভাবগতভাবে এরা শান্তিপ্রিয় হলেও নিজেদের বসবাসের এলাকায় বাইরের অন্য কোনো জনজাতির মানুষের প্রবেশ এরা পছন্দ করে না। এই কারণে এদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি অনেকাংশে অক্ষত রয়েছে।
তবে দাকপা ভাষা ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের জনজাতির মানুষের মুখের ভাষা নয়। দাকপা জনজাতি মূলত পরিযানের মাধ্যমে ভুটান থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে তরাই-ডুয়ার্স পার্বত্য অংশে প্রবেশ করে। তরাই-ডুয়ার্স পার্বত্য অঞ্চলে অন্যান্য পার্বত্য জনজাতির সঙ্গে সম্মিলিত অবস্থায় বসবাসের মাধ্যমে এরা একটি মিশ্র সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে। ফলে ভুটানে বসবাসকারী দাকপা জনজাতি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য কিছুটা বজায় রাখতে পারলেও ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতে তা সম্ভব হয়নি। এমনকি ভুটানেও দেজোঙ্খো, সাংলা ইত্যাদি পার্বত্য জনজাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠেছে। বৌদ্ধ ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রভাবে এদের নিজস্ব ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার-আচরণ এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের অবনমন ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল প্রদেশ এবং ভুটান- কোনো জায়গাতেই ভাষাটি সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়নি। ফলে এই ভাষায় শিক্ষলাভ ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা লাভের সুযোগ নেই। ভাষাটির নিজস্ব স্ক্রিপ্ট তথা লিপির অভাবে দাকপা ভাষার কোনো প্রামাণ্য ব্যাকরণ বা প্রাইমার রচনা করাও সম্ভব হয়নি। এই সমস্ত কারণে দাকপা জনজাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে নিজ জনগোষ্ঠীর ভাষা শিক্ষা ও তার বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ সম্পর্কে আগ্রহ ও সচেতনতার অভাব রয়েছে। ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত ভারতের বিপন্ন ভাষার তালিকায় দাকপা ভাষা ‘ডেফিনিটলি এন্ডেঞ্জারড’ শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।
Census of India- 2011
Dakpa; www.ethnologue.com
Van Driem, G. 1993. Language Policy in Bhutan; SOAS, London
Van Driem, G. 2001. Languages of the Himalayas: An Ethnolinguistic Handbook of the Greater Himalayan Region. Brill Publishers
Van Driem, G. 2007. Dzala and Dakpa from a coherent subgroup within Eastern Bodish, and some related thoughts; University of Bern. DOI: 10.1515/9783110968996.71