টোটো ভাষা
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় ভূটান সীমান্তের পাদদেশে অবস্থিত টোটোপাড়া গ্রামে টোটো জনজাতির মানুষের বাস। “টোটো” ভাষা আসলে টোটোদের কথ্যভাষা, যা এই জাতির নামেই নামাঙ্কিত। বিপ্লব নায়ক রচিত “টোটোজাতির কথা” অনুযায়ী বর্তমানে টোটোভাষী মানুষের সংখ্যা ১৫০০ জনের কিছু বেশি (২০১৫, জুন)। এই অঞ্চলে টোটো ছাড়াও নেপালি ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের বাস,তাদের সংখ্যা ১৮০০’র কিছু বেশি।
গ্রিয়ারসনের LSI খণ্ড ৩ ভাগ ১ (১৯০৯, পৃষ্ঠা ১৭৭-২০০) অনুযায়ী টোটো একটি তিব্বত-বর্মীয় ভাষা। এছাড়াও এথনোলগ অনুযায়ী এই ভাষাটি সিনো-তিব্বতীয় ও সিয়ামিজ়-চাইনিজ় শ্রেনির ভাষা। টোটোপাড়া অঞ্চলের প্রায় সব মানুষই বাংলা জানেন এবং এই অঞ্চলে নেপালিদের বসবাসের কারণে তারা নেপালি ভাষা ব্যবহারেও যথেষ্ট পটু। টোটোপাড়ার স্কুলগুলিতে বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হয় এবং সরকারি কাজকর্মেও বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়।সাধারণত টোটো জনজাতির মানুষজন নিজেরদের মধ্যেই এই ভাষা ব্যবহার করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। UNESCO র রিপোর্ট অনুযায়ী টোটো একটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষা।
টোটোভাষা মৌখিক পরম্পরায় সমৃদ্ধ। টোটোভাষার গান, লোককথা, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে একটি পত্রিকা মাতৃভাষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়; এই পত্রিকায় টোটো ভাষার সঙ্গে বঙ্গানুবাদ দেওয়া থাকে। টোটোভাষায় সাহিত্য চর্চার রীতি খুব প্রাচীন না হলেও মৌখিক সাহিত্যের নিদর্শন রয়েছে।
টোটোভাষায় সাধারণ বস্তু, ক্রিয়া, সংখ্যা, রং ইত্যাদি পরিচায়ক শব্দ আছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তির টোটো শব্দ সচরাচর শোনা যায় না। ভাষাটি প্রাচীন হওয়ার কারণে প্রকৃতিজাত বস্তুগুলির জন্য পৃথক পৃথক শব্দ টোটো অভিধানে পাওয়া যায়।
এ. কে. চক্রবর্তী টোটো ভাষার সাধারণ শব্দগুলিকে মনোমর্ফিক, মনোসিলেবিক এবং ডাইসিলেবিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন; এছাড়া জটিল শব্দগুলি মাল্টিসিলেবিক এবং অধিকাংশ শব্দেই বাউন্ড-মরফিমের দেখা পাওয়া যায়।
টোটো ভাষার বাক্যের পদ প্রকরণ বাংলার ভাষার মতো অর্থাৎ কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া (SOV)। এই ভাষার একটি বাক্যের উদাহরণ দেওয়া হল।
কা - নাতিহিঙ্গ - জেজেঙ্গমি
I you love
আমি - তোমাকে - ভালোবাসি
পেরুমলস্বামী টোটো ভাষায় ৬টি স্বরধ্বনি এবং ২৩টি ব্যঞ্জনধ্বনির উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গ্রিয়ারসনের LSI খণ্ড ৩ ভাগ ১ (১৯০৯, পৃষ্ঠা ১৭৭-২০০) অনুযায়ী টোটোভাষাতে ৭টি স্বরধ্বনি এবং ১৯টি ব্যঞ্জনধ্বনির উল্লেখ আছে।
পেরুমলস্বামী টোটো ব্যকরণকে অনেকটা বাংলা ও চাইনিজ় ভাষার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিছু টোটো শব্দ আর চাইনিজ় এর মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। এই ভাষায় পদ-প্রকরণগুলি বাংলা ভাষার অনুরূপ অর্থাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া এবং অব্যয়।
বিশেষ্যের তিন প্রকার রূপভেদ দেখা যায়- লিঙ্গ, বচন, কারক-বিভক্তি। সর্বনামের দুই প্রকার রুপভেদ দেখা যায়- বচন এবং কারক-বিভক্তি। ক্রিয়াপদের চার প্রকার রুপভেদ দেখা যায়, যা হলো কাল, ভাব, প্রকার ও পুরুষ।
গ্রন্থপঞ্জী :
Chakraborty, A. K. (2006). Phonological morphological and syntactic study of the Toto language in the light of Bengali and English linguistic analysis.
Devi, G., Singha, S. P., & Acharya, I. (2017). Toto. In D. Toto, & A. Chakraborty, People's Linguistic Survey of India (Paschimbanger Bhasa), Volume 31, Part 3 (pp. 293-303). Orient Blackswan.
Grierson, G. A. (1909). Toto. In Linguistic Survey in India, Vol-3, Part-I (pp. 177-200).
Nayak, B., Toto, S., & Toto, D. (2018). TotoJatir Kotha. Kolkata: Matribhasa.
Perumalsamy, P. (2011). Toto.
Toto English Dictionary. (2015).