দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা
১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে অশোক মিত্র কমিশনের সুপারিশ অনুসারে পূর্বতন অবিভক্ত ২৪ পরগণা জেলাকে ভেঙে পৃথক উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা গঠন করা হয়। এই জেলার উত্তরে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা, উত্তর-পশ্চিমে হাওড়া জেলা, পশ্চিমে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা, পূর্বে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে বৃহত্তম (আয়তনে) এই জেলার আয়তন ৯৯৬০ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যা ৮১৬১৯৬১ জন এবং জনঘনত্ব ৮২০ জন/ বর্গকিমি। কৃষি, ভারি ও মাঝারি শিল্প এবং মৎস্যচাষের উপর ভিত্তি করে এই জেলার অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা। তবে ২০১১ সালের জনগণনা অনু্যায়ী এই জেলার ৩০ শতাংশ অধিবাসী তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। তফশিলি জাতিগোষ্ঠিগুলির মধ্যে পৌণ্ড্র ৬২ শতাংশ, দুলে/বাগদী ৭ শতাংশ, নমঃশূদ্র ৬ শতাংশ, রাজবংশী ৬ শতাংশ এবং কাওড়া ৫ শতাংশ।তফশিলি উপজাতির মধ্যে (২০০১) মুণ্ডা ৩৯ শতাংশ, ভূমিজ ২৩ শতাংশ, ওঁরাও ১০ শতাংশ, বেদিয়া ৭ শতাংশ এবং সাঁওতাল ৫ শতাংশ। গোসাবা ব্লকে এই জনজাতি সম্প্রদায়গুলিকে ঘনসংঘবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। ভূমিজ এবং মুণ্ডা উভয় জনজাতি মুণ্ডারি ভাষা ব্যবহার করে। ভূমিজদের নিজস্ব ভাষাটিকে মুণ্ডারি ভাষার একটি প্রকার হিসেবে গণ্য করা হয়। ওঁরাও জনজাতি কুরুখ ভাষা ব্যবহার করে, যার নিজস্ব লিপি ‘তোলং সিকি’ নামে পরিচিত। এটি একটি দ্রাবিড় ভাষাবংশের ভাষা যার উৎপত্তিস্থল ছোটনাগপুর মালভূমি। বেদিয়া জনজাতি পশিমবঙ্গের এই অঞ্চলে, বেদিয়া কুর্মি বা ‘ছোট কুর্মি’ নামে পরিচিত। বেদিয়া জনজাতি গঙ্গাপারিয়া, নাথোটিয়া এবং জোগিয়ারা নামে তিনটি শাখায় বিভক্ত। এরা কুর্মালি ভাষা ব্যবহার করে। এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের ভারতীয়-আর্য শাখার পূর্বী উপশাখার অন্তর্গত। এই ভাষা লেখার কাজে দেবনাগরী ও ‘চিস’ অথবা ‘কাইঠি’ লিপি ব্যবহৃত হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কুর্মালি ভাষা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম একটি সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় সাঁওতাল জনজাতিরও বসবাস রয়েছে যাদের ব্যবহৃত সাঁওতালি ভাষা একটি সরকারিভাবে স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা হওয়ায় জনজাতির ভাষা হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই জনজাতিগুলি মূলত কৃষিজমি এবং মৎস্যচাষের শ্রমিক হিসেবে এই জেলায় পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশের জেলাগুলি থেকে এসে কাজ করে। এছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সুন্দরবন এলাকার জঙ্গল অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে জনজাতিগুলির মানুষ মধু ও কাঠ সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত। জনজাতিগুলির সহাবস্থানের ফলে লোকসাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি (শিকার উৎসব, দক্ষিণরায় ও ধর্মঠাকুরের পূজা) দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
