পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

খালিং সংস্কৃতি

ঐতিহাসিকভাবে ‘খালিং’ শব্দটি ‘খান দোলিং’ শব্দের একটি বিকৃত রূপ। অন্য মতে, খালিং শব্দটি ‘খালু’ শব্দের বিকৃত রূপ, যা সারচোপ জেলার একটি শস্য। খালিং জনজাতির মানুষ এই শস্যের চাষ এ অভ্যস্ত। এদের আদি ও প্রধান বাসস্থান হলো নেপালের সোলুখুম্বু। কিন্তু তিব্বত থেকে ভোট জাতি খালিংদের ভূমি আক্রমণ করে। একটি চুক্তির মাধ্যমে উচ্চ সোরুখুম্বুতে খালিং ও নিম্ন সোরুখুম্বু তে ভোটদের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। মূলত ব্রিটিশ শাসনকালে চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে এদের ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে পরিযান ঘটে। ‘রাই’ গোষ্ঠীর ২৬টি উপবিভাগের একটি হলো খালিং রাই। এই জনজাতি বর্তমানে নেপালের দুধ কোশী নদীর উভয় তীরে বসতি স্থাপন করেছে। নেপালে খালিংদের নিজস্ব পৃথক ভূমি ও পরিচয়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ‘কিরাত খালিং-রাই উন্নয়ন পর্ষদ’ নামে একটি সংগঠন খালিংদের পৃথক পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। খালিং ভাষার অভিধান, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং মৌখিক ইতিহাসের সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে।

খালিং জনজাতির মূল জীবিকা বাঁশের কাজ। বাঁশের তৈরি বিভিন্নরকম ঝুড়ি এরা ঘরের কাজে ব্যবহার করে। মাদুর বোনা ইত্যাদি কাজ মূলত এই জনজাতির পুরুষরা করে থাকে। পলু নামে একপ্রকার চোঙাকৃতি বাঁশের ঝুড়ি শস্য বহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। ডেলি নামে একপ্রকার আয়তাকার ঝুড়িও জামাকাপড় রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। খেং নামে একপ্রকার ছোট পায়াযুক্ত ঝুড়ি অল্প পরিমাণে শস্য বা ময়দা রাখতে কাজে লাগে। এছাড়া শস্যের জমিতে জলের যোগান দেওয়ার জন্যও বাঁশ নির্মিত পাইপ ব্যভার করা হয়। চাষের কাজে কাঠের তৈরি লাঙল ব্যবহার করা হয়। কাপড় বোনার কাজটি খালিং জনজাতির মহিলারা সম্পন্ন করে। মেয়েদের পোষাক হলো ভাঙ্গারা এবং ছেলেদের পোষাক হলো দাজুরা অথবা ফুরখা। খালিং জনজাতি পূর্বে মূলত বাঁশের তৈরি অস্থায়ী বাড়িতে বসবাস করলেও বর্তমানে সেগুলি গবাদি পশু রাখতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে খালিং জনজাতির বাড়িগুলি পাথর নির্মীত হয়। বর্তমানে কৃষি ও বাঁশের কাজ ছাড়াও স্থানীয় বাজারে জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়, উদবৃত্ত শস্য বিক্রয়, মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমেও খালিংরা জীবিকা অর্জন করে থাকে।

খালিং জনজাতির উপাস্য দেবতা হলেন ‘আমা জোমো’ এবং ‘মেমে ডাংলিং’। জন্মের দেবতা হলেন ‘কে সাং’ যাকে প্রতিটি খালিং গ্রামেই বিভিন্ন রূপে উপাসনা করা হয়। এর রূপগুলি হলো- ‘খারুং লা’, ‘চুরচুর বু’, ‘সেখার’, ‘জোমো ডাংলিং’ ইত্যাদি। এদের প্রধান উৎসব হলো ‘জোমো ডাংলিং সোয়েলখা’ যা বছরে দুবার পালিত হয়। গ্রীষ্মকালে চতুর্থ মাসের চোদ্দ তারিখ এই উৎসব পালিত হয়। মোঙ্ক অর্থাৎ সাধুরা প্রতি চতুর্থ মাসের কুড়ি তারিখ ডাংলিং সো তে যান। আত্মার মুক্তির উদ্দেশ্যে ‘সোয়েলখা’ পালিত হয়। উৎসবগুলির সময় তীর-ধনুকের প্রতিযোগিতা, ডেগর, খুরু, কোলুকপু ও সেচু ইত্যাদি অনুষ্ঠান হয়। ‘বিবলিম’ নামে বিশেষ একপ্রকার বাঁশি মহিলা ও পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করে। ‘ভাম’ নামে একপ্রকার সঙ্গীতের যন্ত্র মহিষের শিং দিয়ে তৈরি হয়। এটি খালিংদের প্রধান উৎসব চলাকালীন বাজানো হয়। ‘তুংমা’ নামে একরকম বাঁশের তৈরি তারের বাদ্যযন্ত্রেরও প্রচলন আছে।

প্রতি বছর মে মাসে খালিং জনজাতি ‘ওয়াস’ নামে একপ্রকার নাচের উৎসব পালন করে। এই উৎসবে পৃথিবীর উপাসনা করা হয়। নাচ মূলত মহিলারা প্রদর্শন করে, পুরুষরা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর দায়িত্বে থাকে। ‘নাডাক’ নামে এক বিশেষ প্রকার গ্রামীণ অপেরা নাটকের প্রচলন রয়েছে, যেগুলি নেপালি ভাষায় লিখিত। এই নাটকের চরিত্রগুলি (মহিলা চরিত্র সহ) যুবকদের দ্বারাই অভিনীত হয়। তবে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে আগ্রহের অভাবে এই উৎসব ও প্রতিযোগিতাগুলির জৌলুষ ক্রমশ কমছে।

গ্রন্থপঞ্জী:

Census of India-2011

Frydenlund, S.A. 2015. LABOR STORIES FROM SOLUKHUMBU: CASE STUDIES OF KHALING INDEGENOUS DISCOURSE AND SITUATIONAL SHERPA IDENTITY. University of Colorado

Guillaume, Jacques et al. 2012 An Overview of Khaling Verbal Morphology. Language and Linguistics.

Lahaussois, A. 2017 Ideophones in Khaling Rai. Linguistics of the Tibeto-Burman Area, Dept. of Linguistics, University of California, pp. 179-201

Toba, I. Folk Art and Culture Change as Observed in a Khaling Village. Tokyo