পশ্চিমবঙ্গের ভাষাবৈচিত্র্য ড্যাশবোর্ড

ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ

তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন বিভাগ

পূর্ব বর্ধমান জেলা

বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত পূর্ব বর্ধমান জেলা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল পূর্বতন বর্ধমান জেলাকে ভেঙে তৈরি করা হয়। এই জেলার উত্তরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা জেলা, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ, পূর্বে নদীয়া জেলা, পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলা এবং দক্ষিণে হুগলি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা অবস্থিত। এই জেলার মোট আয়তন ৫৪৩২ বর্গকিমি এবং ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৪৮৩৫৫৩২ জন এবং জনঘনত্ব ৮৯০ জন/ বর্গকিমি। এই জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষির (ধান উৎপাদন) এর উপর নির্ভরশীল। বর্ধমান জেলার বিভাজনের সময় খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি পশ্চিম বর্ধমানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রধান সরকারি ভাষা বাংলা, যা এখানকার ৮৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা। এছাড়া এই জেলার ৬ শতাংশ মানুষ হিন্দি, ৩ শতাংশ মানুষ সাঁওতালি এবং ২ শতাংশ মানুষ উর্দু ভাষা ব্যবহার করেন। বর্ধমান জেলায় ব্যবহৃত বাংলা মূলত কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মান্য চলিত বাংলা, যা ‘রাঢ়ী’ নামে পরিচিত। শব্দের শুরুতে ‘অ’ স্বরধ্বনির ‘ও’ তে রূপান্তর (অতি>ওতি, মধু>মোধু), অভিশ্রুতি (করিয়া>কইর‍্যা>করে) এই প্রকারটির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়া নাসিক্যীভবনের (চন্দ্র>চন্দ>চাঁদ) প্রবণতা, অন্তঃস্থ ব্যাঞ্জনের উচ্চারণের সময় শ্বাসাঘাতের অভাব (দুধ>দুদ) ইত্যাদি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। মান্য চলিত বাংলা পশ্চিমবঙ্গে লেখাপড়া ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত ভাষা যার পৃথক বাংলা লিপি ও লিখিত সাহিত্যের অস্তিত্ব রয়েছে। হিন্দি ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের ভারতীয় আর্য শাখার পশিমা উপশাখার অন্তর্গত। দেবনাগরী ও ঐতিহাসিকভাবে ‘কাইঠি’ লিপি ব্যবহার করা হয়। এটি ভারত সরকার স্বীকৃত দুটি প্রধান সরকারি ভাষার মধ্যে অন্যতম-অপরটি হলো ইংরেজি। পূর্বতন বর্ধমান জেলায় কয়লা নির্ভর ভারি শিল্পের বিকাশের কারণে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলা ও পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষের আগমন ঘটে যাদের মাতৃভাষা হিন্দি অথবা পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে হিন্দি ভাষা উঠে আসে। সাঁওতালি ভাষা ভারতের একটি স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা। এটি অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির উত্তর মুণ্ডা শাখার অনতর্ভুক্ত। মূলত পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল জনজাতির কিছু অংশ বর্ধমানের এই অংশে কৃষি ও শিল্পের শ্রমিক হিসেবে বসতি স্থাপন করে। বর্তমানে সাঁওতালি ভাষায় পশ্চিমবঙ্গে লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে। এই ভাষার ‘অলচিকি’ লিপি লিখিত সাহিত্যের বিকাশে সহায়তা করেছে। এছাড়া পূর্ব বর্ধমান জেলায় উর্দু ভাষাও প্রচলিত। এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের ভারতীয়-আর্য শাখার ‘মধ্য’ (সেন্ট্রাল) উপশাখার অন্তর্গত। উর্দু ভাষায় পারস্য-আরবিক লিপি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এটিও ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিল অনু্যায়ী একটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ব্যবহৃত ভাষাসমূহ মূলত সরকারি ভাষা হওয়ায় জনজাতির ভাষাগুলি বিচ্ছিন্নভাবে থাকলেও সেই অর্থে এদের সাংস্কৃতিক ও ভাষিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটেনি। ওঁরাও, মাহালি প্রভৃতি জনজাতি (যাদের মাতৃভাষা যথাক্রমে কুরুখ ও মাহালি) এই জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। কুরুখ ভাষা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা।