ইয়াক্কা ভাষা একটি সিনো-তিব্বতিয় ভাষাগোষ্ঠীর কিরান্তি শাখার পূর্ব উপশাখার ভাষা যা মূলত নেপাল, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার কিছু অংশে প্রচলিত। এই ভাষা এবং ভাষা ব্যভারকারী জনজাতিটি সমনামে পরিচিত। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের মোট সংখ্যা ২০০০০। বেলহারে, আটপারে, চিন্তাং, চুলুং ইত্যাদি পূর্ব কিরান্তি ভাষাগুলির সঙ্গে ইয়াক্কা ভাষার নিকট সম্পর্ক রয়েছে। এই ভাষার নিজস্ব কোনো লিপি নেই, লেখার জন্য দেবনাগরী লিপি ব্যবহার করা হয়। ভাষারটির তিনটি প্রকারের কথা জানা যায় যারা পরস্পরবোধ্য- মুগালি, ফাংদুয়ালি এবং লুম্বা ইয়াক্কা।

ইয়াক্কা ভাষায় ৫টি স্বরধ্বনি থাকলেও অন্যান্য কিরান্তি শাখার ভাষার মতোই এই ভাষায় কোনো সেন্ট্রালাইজড স্বরধ্বনির অস্তিত্ব নেই। মিনিমাল পেয়ার খুঁজে পাওয়া যায় না। ডিপথং এর অস্তিত্ব রয়েছে। ২২টি ব্যঞ্জনধ্বনির অস্তিত্ব আছে। ভয়েসড অর্থাৎ শ্বাসাঘাতযুক্ত অবং ভয়েসলেস অর্থাৎ শ্বাসাঘাতহীন ধ্বনির সংমিশ্রণ অর্থাৎ মার্জার কিরান্তি শাখার ভাষাগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেস অর্থাৎ কারক এবং বচনের উপর নর্ভর করে ইয়াক্কা ভাষায় নাউন অর্থাৎ বিশেষ্যের ইনফ্লেকশন ঘটে। বচন তিন প্রকার- একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন। পুরুষ, বচন, ক্রিয়ার কাল, প্রকার ইত্যাদি ভেদে ক্রিয়াপদেরও ইনফ্লেকশন ঘটে। পজেসিভ সর্বনামের ক্ষেত্রে কর্তাকে বাদ রাখা এবং সমন্বিত করা, এই দুটি বিষয়ের নিরিখে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এই পজেসিভ প্রোনাউন অর্থাৎ কর্তৃত্বসূচক সর্বনামগুলি পার্সোনাল প্রোনাউন অর্থাৎ ব্যক্তিবাচক সর্বনামের সঙ্গে ‘-কা’ এই জেনিটিভ কেস মার্কারটির সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে গঠিত হয়। প্রশ্নবাচক সর্বনামগুলি হলো ‘ইসা’ অর্থাৎ কে, ‘ইয়া’ অর্থাৎ কি, ‘হেতনা’ অর্থাৎ কোনটি, ‘ইমিন’ অর্থাৎ কেমন, ‘ইজাং’ অর্থাৎ কেন, ‘হেতনে’ অর্থাৎ কোথায় ইত্যাদি। ইয়াক্কা ভাষায় এর্গেটিভ-অ্যাবসোলিউটিভ কেস সিস্টেম প্রচলিত, যেখানে এবসোলিঊটিভ কেস এর কোনো মার্কার থাকে না, এর্গেটিভ, জেনিটিভ, অ্যাবলেটিভ, কমিটেটিভ ও ইন্সট্রুমেন্টাল কেস মার্কিং করা হয়। কর্তা এবং ভোক্তা উভয়ের পুরুষ এবং বচনগত বৈশিষ্ট্যই ক্রিয়াপদে প্রতিভাত হয়, যেই কারণে এই ভাষায় ক্রিয়ার মরফোলজি জটিল। ‘মুড’ এর ক্ষেত্রে সাবজাংটিভ মুডের কোনো মার্কিং হয় না কিন্তু ইম্পারেটিভ মুড মার্কিং লাভ করে।

গ্রন্থপঞ্জী :