আও জনজাতি প্রধানত প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসরণ করে সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার গ্রহণ করে। এই খাবারের সাথে পানীয় হিসেবে মূলত চা পানের প্রচলন রয়েছে। আও জনজাতির নিজস্ব ঐতিহ্যপূর্ণ পোশাকের ঐতিহ্য রয়েছে। আও-নাগা সম্প্রদায়ের পুরুষরা যুদ্ধের সময় বিশেষ একপ্রকার শাল ব্যবহার করে যা ‘মাংকোতেপসু’ নামে পরিচিত। আও সম্প্রদায়ের নিজস্ব বাড়ি ‘আও-মোরাং’ নামে পরিচিত।
আও সম্প্রদায়ের গ্রামীণ শাসনব্যবস্থা ‘পূটু মেনদেন’ নামক সংগঠনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর কার্যকাল ত্রিশ বছর। প্রত্যেকটি গোত্র থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই সংগঠন গঠিত হয়। ত্রিশ বছর পর উত্তর প্রজন্মের প্রতিনিধিরা পূর্ব প্রজন্মের স্থান গ্রহণ করে। এই সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ‘তাতার’ নামে পরিচিত। এই সংগঠনের প্রধান হলেন ‘উঙ্গার’ যিনি পেশায় পুরোহিত।
আও-নাগা জনজাতির প্রাচীন ধর্মে মূলত প্রকৃতি ও জীবজন্তুর উপাসনার প্রথা প্রচলিত ছিল। এরা মূলত ধর্মীয় অনুশাসনকেন্দ্রিক জীবন যাপন করে এবং বিশ্বাস করে যে একজন মানুষের জীবনের সমস্ত কিছুই ‘সুংরেম’ নামক সর্বশক্তিমান দেবতা নিয়ন্ত্রণ করেন। ‘সুংরেম’ কোনো একজন নির্দিষ্ট দেবতা নন, বরং তিনি বিভিন্ন রূপে পূজিত হন। ‘লিচাবা’ অর্থাৎ পৃথিবী তথা সৃষ্টির দেবতা, ‘মেয়ুতসুংবা’ অর্থাৎ মৃত্যুর দেবতা, ‘আনিংতসুংবা’ অর্থাৎ স্বর্গের দেবতা ইত্যাদি রূপে একটিই দেবতার পূজা প্রচলিত। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পালিত "মোতাসু” উৎসব আও-নাগা জনজাতির প্রধান উৎসব। বীজ বপনের পর এই জনজাতি “মোতাসু মোং” উৎসব পালন করে। মূলত চাষের জমিতে পরিশ্রমের কাজগুলি শেষ হওয়ার পর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে এই উৎসবটি পালিত হয়। ‘পেপি গান’ ও নাচ এই উৎসবের প্রধান অঙ্গ। এই উৎসবের সময় ‘সানপাংতু’ নামে বিশেষ একটি রীতি পালন করা হয়, যেখানে আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে পুরুষ ও মহিলারা তাদের ভালো পোশাক পরে বসে, মহিলারা মাংস ও মদ পরিবেশন করে, এবং গ্রামের গুনিন জাতীয় ব্যক্তিরা ভবিষ্যৎবাণী করে থাকেন। এছাড়া ফসল তোলার সময় ‘সুংরেম মং’ নামে একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। বর্তমানে অগস্ট মাসের ১-৩ তারিখ এই উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবটি পালনের আগে ‘সুংকুম’ অর্থাৎ গ্রামের প্রধান প্রবেশপথটি বন্ধ করে দিয়ে বাইরের মানুষজনের আগমনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রংবেরঙের জামাকাপড় পরে আও জনজাতির পুরুষ ও নারী উভয়েই ফসল ভালো হওয়ার জন্য দেবতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।
প্রাচীন ধর্মের পরিবর্তে আও-নাগাদের মধ্যে বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব বাড়ছে। এই ধর্মের প্রভাবে আও নাগাদের মধ্যে সাক্ষরতা,শিক্ষা এবং দৈহিক বিকাশও ঘটছে। অন্যান্য নাগা জাতিগোষ্ঠীগুলির চেয়ে আও-নাগা জনজাতি সর্বাংশে উৎকর্ষ সাধন করলেও এদের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং ভাষাগত বৈশিষ্ট্যগুলি খ্রিস্টান ধর্ম ও ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ গঠিত নাগা পিপলস কনভেনশন ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে থেকে স্বাধীনচেতা নাগাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। নাগাল্যান্ড পিস কাউন্সিল এর উদ্যোগে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ ভারত সরকার ও নাগা ফেডারেল গভর্নমেন্টের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
Clark, E. W. (1981). The Ao-Naga Grammar with Illustrations, Phrases and Vocabulary. Delhi: Gian Publications. (Original work published 1893).
Coupe, Alexander, R. (2003) A Phonetic and Phonological Description of Ao: A Tibeto-Burman Language of Nagaland, North-east India. Pacific Linguistics. Research School of Pacific and Asian Studies, The Australian National University.
Coupe, Alexander, R. (2004). The Mongsen Dialect of Ao: a language of Nagaland. PhD dissertation, La Trobe University
Census of India- 2011