পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম-মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, বীরভূম, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি জেলায় কোড়া জনজাতির মানুষ বসবাস করেন। এছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও বিহার রাজ্যে কোড়া উপজাতির মানুষ বসবাস করেন। কোড়া জনজাতি আদি অস্ট্রাল মুন্ডা উপজাতির একটি পৃথক শাখা। ‘মাটি কাটা’ কে পেশা হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে কোড়াদের সাথে মুন্ডাদের বিভাজন ঘটে; যে কারণে কোড়াদের সামাজিক ও ভাষিক বৈশিষ্ট্যে মুন্ডা উপজাতির ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গ্রীয়ারসন (১৯০৪/১৯৯০/১৯৯৪/২০০৫) এর মতে ‘কোড়া’ সম্ভবত আর্যভাষার শব্দ, যার অর্থ ‘যে খোঁড়ে’ (digger)। গ্রিয়ারসন ‘কোড়া’ কে কোন পৃথক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। তাঁর মতে কোড়া ভাষা মুন্ডারি ভাষার একটি উপভাষা মাত্র। কারণ তিনি অঞ্চলভেদে কোড়া উপজাতির মানুষদের কুরুখ মধ্যে কুরুখ ও মুন্ডারি ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করেছেন। গ্রিয়ারসন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া এবং বীরভূম জেলায় বসবাসকারী কোড়া উপজাতির মানুষের মধ্যে ভাষাগত পার্থক্য নির্ণয় করেছেন- তাঁর মতানু্যায়ী, বাঁকুড়া জেলায় বসবাসকারী কোড়ারা নাগপুর থেকে আগত এবং এরা সাঁওতালি ভাষার একটি উপভাষায় কথা বলেন। অপরপক্ষে, বীরভূমের কোড়া উপজাতির মানুষ শুদ্ধ মুন্ডারি ভাষায় কথা বলেন। অপরপক্ষে, ভাষা-বিশেষজ্ঞ ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কের মতে, অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর মুন্ডারি শাখার অন্তর্গত ১১টি ভাষার একটি হলো কোড়া, যার মুন্ডারি ভাষার থেকে স্বতন্ত্র একটি নিজস্ব স্বত্তা বর্তমান। এথনোলোগ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী,অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার ১৬৬টি ভাষার সমন্বয়ে গঠিত এবং দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত- মনখেমার এবং মুন্ডা। মুন্ডা শাখার উত্তর- মুন্ডা উপশাখার অন্তর্গত ভাষাগুলির একটি হলো কোড়া। কোড়া ভাষার পরিবর্ত নাম হলো ‘কোড়া ঠার’। কোড়া উপজাতির প্রবীণদের মধ্যে বর্তমানে কোড়া ঠারের প্রচলন রয়েছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধলভূম ও মানভূম কোড়া উপজাতির আদি বাসস্থান হিসেবে স্বীকৃত।

জনগণনা (২০১১) অনু্যায়ী ভারতে বসবাসকারী মোট কোড়া জনসংখ্যা ৪৭২৬৮ জন- পুরুষ ২৩৫৫৯ এবং মহিলা ২৩৭০৯ জন। ১৯৭১, ১৯৮১, ১৯৯১ ও ২০০১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই কোড়া উপজাতির মোট জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪৩৩৩, ২৩১১৩, ২৮২০০ ও ৪৩০৩০ জন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যথাক্রমে দশকপ্রতি ৬১.২৬, ২২.০১, ৫২. ৫৯ এবং ৯.৮৫ শতাংশ।

কোড়া ভাষার সাথে অন্যান্য অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবারের ভাষা- সাঁওওতালি, মুন্ডারি, কোল ইত্যাদির আভিধানিক ও শব্দকোষ- সম্বন্ধীয় সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয়। উক্ত মাপকাঠির প্রেক্ষিতে কোড়া ভাষার সঙ্গে উপরোক্ত তিনটি ভাষার যথাক্রমে ৪৯-৫৫ শতাংশ, ৬১-৬৭ শতাংশ এবং ৫৭-৬০ শতাংশ সাদৃশ্য বর্তমান।

বাক্যের গঠন-পদবিন্যাসে কোড়া ভাষায় বাংলা ভাষার প্যাটার্ন (S-O-V) ব্যবহৃত হয়।

আমি বই পড়ি

ইঞ বই পডহা তানিং

কর্তা (S) কর্ম (V) ক্রিয়া (O)

গ্রন্থপঞ্জী :