এরা পূর্বে ‘হান্টার-গ্যাদারার’ অর্থাৎ জঙ্গল থেকে খাদ্য ও বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে জীবিকা অর্জন করলেও পরবর্তীকালে জীবিকা পরিবর্তনের মাধ্যমে এরা স্থানীয় রাজার মালবাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ‘ভারিয়া’ কথাটি হিন্দি ভাষার শব্দ ‘ভার’ থেকে এসেছে। ভারিয়া জনজাতির বর্তমান জনবিরলতার কারণে এরা ভারত সরকার কর্তৃক Primitive Vulnerable Tribal Group (PVTG) এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। জঙ্গলকেন্দ্রিক জীবনযাপনের জন্য এরা বনদেবীর উপাসক। তবে বর্তমানে ভারিয়া জনজাতির নতুন প্রজন্মের খুবই স্বল্প একটি অংশ ভারিয়া ভাষা বুঝতে ও এই ভাষায় কথা বলতে পারে। বর্তমানে এই ভাষাটি হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। ফলে এই ভাষা জনজাতিটির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলিও ক্রমে অবলুপ্ত হচ্ছে। স্থানীয় বিদ্যালয়গুলিতে পড়াশুনোর মাধ্যম হিসেবে হিন্দি ভাষা ব্যবহৃত হওয়ার ফলে এই ভাষা চর্চার সুযোগ ক্রমশ কমছে। নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহের ফলে ভারিয়া ভাষা এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে সঞ্চারিত হওয়ার সুযোগ পায় না; যা এই ভাষার অবলুপ্তির একটি প্রধান কারণ। এই জনজাতির একজন বিশিষ্ট পুরোহিতের কথায়, এই ভাষাই ছিল তাদের জ্ঞানোন্মেষের কারণ এবং অতীতের সঙ্গে মূল যোগসূত্র। বর্তমানে এই ভাষার ক্রমাবনমন এই জনজাতির নিজস্ব ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ক্রমশ বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর কারণ, এদের আদি বাসস্থান সংলগ্ন এলাকায় হিন্দি ও অন্যান্য সরকারি ও আঞ্চলিক ভাষার সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও ভাষা-রাজনীতি। এই জনজাতির যুবকদের সঙ্গে বৃদ্ধদের অধিকতর ভৌগোলিক দূরত্বে বসবাসের কারণে কথোপকথনের উপযুক্ত প্রতিবেশের অভাবেও ভাষা সঞ্চারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই ভাষা ব্যবহারকারী জনজাতিটির ভৌগোলিক অবস্থান দ্রাবিড় ভাষাবংশের অন্যান্য ভাষাগুলির স্থান থেকে অনেক দূরে- মধ্যভারতে। এই যোগাযোগের অভাবে ভারিয়া ভাষার দ্রাবিড়ীয় বৈশিষ্ট্যগুলি হারিয়ে গিয়ে হিন্দির প্রভাবে ভারতীয় আর্য ভাষার রূপ পরিগ্রহ করেছে। ভাষাটির বৈশিষ্ট্যগুলির সংরক্ষণের জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকার বর্তমানে ‘ভারিয়া অভিকরণ’ নামে একটি সরকারি সংস্থা গঠন করেছে, যারা ভারিয়া সংস্কৃতির উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে চলেছে। ভারিয়া জনজাতির মাইগ্রেশন অর্থাৎ পরিযানকেই ভাষা ও সংস্কৃতির বিলুপ্তির মূল কারণ হিসেবে অনেকে চিহ্নিত করেন। মধ্যপ্রদেশের পার্বত্য ও অরণ্যসঙ্কুল স্থানের অপর একটি জনজাতি ভীলদের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ভীল জনজাতির পরিযান ঘটলেও এবং এরা নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হলেও নিজেদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু ভারিয়া জনজাতির মানুষ পরিযানের পর অপর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেনি। একই কারণে এই অঞ্চলে প্রচলিত অপর জনজাতির ভাষাগুলিও, যেমন, কোল, কোরখু, সাহারিয়া ইত্যাদি, তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে। বর্তমানে ভারিয়া ভাষাকে ‘ক্রিটিকালি এন্ডেঞ্জারড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
ভারিয়া জনজাতির বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর ও ভূমিহীন। জঙ্গল থেকে কাঠ, মধু, ভেষজ উদ্ভিদ এবং অন্যান্য বনজ সম্পদ সংগ্রহ করেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাব রয়েছে। দুর্বল আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাবে ভারিয়া জনজাতির মধ্যে টিউবারকিউলোসিস অর্থাৎ যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ভারিয়া জনজাতির নিজস্ব দেবদেবীর মধ্যে বড়োদেও, বুড়াদেও, মুতভা, নাগবাবা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই জনজাতির কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুর এগারো দিন পর ‘বাদী রোটি’ নামক পারলৌকিক কাজের অনুষ্ঠান করা হয়। এখানে মৃত মানুষটির একটি পাথরের মূর্তি তৈরি করে তার উপাসনার মাধ্যমে তাকে গৃহদেবতার স্থান দেওয়া হয়।
এদের ঘরবাড়িগুলি মূলত খড়, বাঁশ এবং মাটি দিয়ে নির্মীত হয়। এই জনজাতি তিনটি উপশাখায় বিভক্ত, যথা- ভূমিয়া, ভুঁইহার ও পাণ্ড। ভারিয়া জনজাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ‘ভাদাম’ ও ‘সাইতাম’ নাচ উল্লেখযোগ্য। ভাদাম নাচ ‘গুন্নু শাহী’, ‘ভাদনি’, ‘ভাদনাই’, ‘ভারনোতি’ ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এই নাচ অনুষ্ঠানের সময় ঢোল, টিমকি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ‘টিম্মি’ ও ‘সিম্বল’ নামে মেঘগর্জনের মতো আওয়াজযুক্ত দুটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্রেরও ব্যবহার রয়েছে। ‘সাইতাম’ নাচ মূলত মেয়েরা নাচে, পুরুষরা ঢোল বাজিয়ে সঙ্গত করে। কিশোরবয়সীরা সাইতাম নাচে অধিক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে। মূলত এই জনজাতির বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় এই নাচ সারারাত ধরে চলে। এদের নিজস্ব এই নাচগুলির মাধ্যমে এই জনজাতির জীবন ও প্রকৃতির প্রতি গভীর আনুগত্যের বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
Census of India- 1981
Folk dances of Madhya Pradesh presented under Uttaradhikar series; 2020.
How modernization deleted endangered tribe’s dialect. Outlook; 2019
Life style of Bharia Tribe; bharia.in; Bharia Language Development
Success Story on Development of “Primitive Tribes” in the State under RKVY Madhyapradesh.